বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রবীন্দ্র জীবনীকার হিসেবে খ্যাতিমান। গ্রন্থাগার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে। চার খণ্ডে রচিত ‘রবীন্দ্রজীবনী’ তাঁর সাহিত্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এটি রচনায় সময় লেগেছে প্রায় পঁচিশ বছর। গ্রন্থাগার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবেও তাঁর অবদান রয়েছে। আজ এই সাহিত্যস্রষ্টার ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৯২ সালের ২৫শে জুলাই নদীয়ার রানাঘাটে। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছেন রানাঘাট পালচৌধুরী স্কুলে। ১৯০৮ সালে প্রভাতকুমার জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান লাভ করেন। পরের বছর চলে যান শান্তিনিকেতনে। সেখানে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগ দেন তিনি। শান্তিনিকেতনে কেটেছে তাঁর জীবনের দীর্ঘ সময়। এখানে নিবিড় জ্ঞান সাধনায় তিনি যেন নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। ১৯১৮ সালে প্রভাতকুমার শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে শিক্ষকতা এবং গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বভার নেন। বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনাও করেছেন তিনি। বিশ্বভারতীর গ্রন্থাগার গঠনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাঁর যুক্তিবাদী, প্রগতিমনস্ক ও অসামপ্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নিজ কর্ম ও সাধনায়। তাঁর অনুসন্ধিৎসা ছিল বিচিত্র ও বহুমুখী। সিলভা লেডির কাছে শান্তিনিকেতনে তিনি চীনা ও তিব্বতি ভাষা আয়ত্ব করে বৌদ্ধ ও হিন্দু দর্শনের চীনা ভাষ্য নিয়ে গবেষণা করেন। ইতালির বিখ্যাত পণ্ডিত তুচ্চির কাছে কুংফুৎসুর গ্রন্থ সম্পর্কে পাঠ নিয়ে তা অনুবাদ করেন। তাঁর রচিত ‘রবীন্দ্রজীবনী’ গ্রন্থে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্তভাবে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিজীবন, সাহিত্যকীর্তি, সমাজ-চিন্তা, রাষ্ট্র-দর্শন, শিক্ষা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয়ের পরিচয় মেলে। কবিগুরুকে নিয়ে তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ : ‘রবিকথা’, ‘রবীন্দ্র জীবনকথা’, ‘রবীন্দ্রগ্রন্থপঞ্জী’, ‘রবীন্দ্রনাথের গান – কালানুক্রমিক সূচি’ ইত্যাদি। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘প্রাচীন ইতিহাসের গল্প’, ‘ভারত পরিচয়’, ‘বঙ্গ পরিচয়’, ‘পৃথিবীর ইতিহাস’, ‘রামমোহন ও তৎকালীন সমাজ ও সাহিত্য’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। রাশিয়ার ভ্রমণ নিয়ে রচিত ‘সোভিয়েত সফর’ এবং আত্মজীবনী ‘ফিরে ফিরে চাই’ লেখকের আত্ম-অনুসন্ধানমূলক দুটি রচনা। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগত্তারিণী, ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ৮ই নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন।