প্রকাশ্যে যুবলীগ নেতা, গোপনে ইয়াবা বিক্রেতা

আজাদী অনলাইন | মঙ্গলবার , ৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৪৮ অপরাহ্ণ

আনোয়ারা উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ (৪৫) আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি দাপুটে রাজনীতিবিদ হলেও আড়ালে করেন ইয়াবা ব্যবসা।
যুবলীগের নেতা হওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশ কখনও তাকে সন্দেহ করেনি। আর এ সুযোগে গোপনে করে গেছেন ইয়াবার ব্যবসা।
এবার আনোয়ারা থেকে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে বিক্রি করতে এসে ধরা পড়েছেন চকবাজার থানা পুলিশের হাতে। বাংলানিউজ
চকবাজার থানাধীন শাহজাদা মার্কেটের নিচ থেকে ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মো. ইউসুফকে গ্রেফতার করে চকবাজার থানা পুলিশ। মো. ইউসুফ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, “চকবাজার এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সময় হাতেনাতে মো. ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।”
ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, “ইউসুফ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাকে রিমান্ডে এনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
আনোয়ারা থানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ৩ জুলাই আনোয়ারা থানা পুলিশের হাতে মদসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন মো. ইউসুফ। তখন তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের হয়।
এছাড়া দুই বছর আগেও নগরীর কোতোয়ালী থানায় ইয়াবাসহ আটক হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তখন ‘প্রভাবশালীদের চাপের মুখে’ ইউসুফকে ‘ছেড়ে দেয় পুলিশ’। ঐ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও দায়ের হয়নি তখন।
২০০৭ সালে মদসহ গ্রেফতারের পরও উপজেলা যুবলীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে পদ পান মো. ইউসুফ।
উপজেলা ও জেলা যুবলীগের দুই নেতার আশির্বাদে এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বদান্যতায় পদ পেয়ে যান তিনি। তবে এখন তার দায় নিতে চান না কেউ।
মো. ইউসুফ আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শওকত ওসমানের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন বলে জানা গেছে।
আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শওকত ওসমান বলেন, “ইয়াবাসহ ইউসুফের গ্রেফতারের খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
ইউসুফ ২০০৭ সালে মদসহ গ্রেফতারের পরও উপজেলা যুবলীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবে কীভাবে পদ পান তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কমিটি তো আমরা করিনি। তার বিষয়ে জেলা যুবলীগের নেতাদের জিজ্ঞেস করুন।”
ইউসুফের বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। উপজেলা যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শওকত ওসমানকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যের আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ।
তিন মাসের জন্য অনুমোদন করা এ কমিটিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনও কোনো সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি তারা। আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১১ মাস আগে।
কক্সবাজারের টেকনাফের পর চট্টগ্রামের আনোয়ারা এলাকা মিয়ানমার থেকে ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশের অন্যতম রুট।
সম্প্রতি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৭ বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক করেছে আনোয়ারা থেকে।
এছাড়া আনোয়ারা থানা পুলিশের হাতেও নিয়মিত ইয়াবার চালান আটক হচ্ছে।
ইউসুফ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ এলাকায় এতদিন ইয়াবার ব্যবসা করে এসেছেন।
আনোয়ারা উপজেলায় সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ‘নজরদারিতে’ রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে পিকআপের ধাক্কায় ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধফলাফলের মোড় ঘোরাতে পারে যে অঙ্গরাজ্যগুলো