আমদানি-রপ্তানি কাজে গতিশীলতা আনতে বিভিন্ন সময় বন্দরের ১২টি গেটেই ফিঙড কন্টেনার স্ক্যানার বসানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সেই দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা সেমিনারে বক্তব্যও রেখেছেন। তবে সেই আলোচনা কেবল বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকে এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। প্রতি বছর উদ্যোগ নেয়া হলেও ১২টি গেটের মধ্যে বর্তমানে ৫টি স্ক্যানারে চলছে কন্টেনার স্ক্যানিংয়ের কাজ। দিন দিন বন্দরে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। তাই অনেক সময় স্ক্যানারের স্বল্পতা কিংবা কারিগরি ত্রুটির কারণে কন্টেনারের জট লেগে যায়। এতে ব্যাহত হয় পণ্য খালাস কার্যক্রম। তাই বন্দর ব্যবহারকারীরা প্রতিটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানোর জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও আহ্বান জানান। অন্যদিকে গত ২০১৬ সালের মার্চে বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানোর পাশাপাশি আলাদা স্ক্যানিং বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সেই সময় এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয় এনবিআরে। উদ্যোগের সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বিভাগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫টি ফিক্সড কন্টেনার এবং দুটি মোবাইল স্ক্যানারে চলছে বন্দরের কার্যক্রম। বন্দরের ৪ নম্বর, ৫ নম্বর এবং সিসিটি-২ টার্মিনালে স্থাপিত তিনটি ফিঙড স্ক্যানার আগে থেকেই ছিল। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরের এক নম্বর গেট এবং নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) তিন নম্বর গেটে স্থাপন করা হয় আরো দুটি ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার। এছাড়া সিসিটি ২ ও জিসিবি ২ নম্বর গেটে রয়েছে মোবাইল স্ক্যানার। আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পণ্য স্ক্যানিং করে খালাস করা হলে কোনো আমদানিকারক এক পণ্য এনে অন্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে বিদেশে অর্থপাচার করতে পারবেন না। আবার বেশি দামের পণ্য এনে কম দামি পণ্য হিসেবে অথবা উচ্চ শুল্ককরের পণ্য আমদানি করে বিনা শুল্ক অথবা কম শুল্কের পণ্য হিসেবে ছাড় করাতে পারবেন না। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি অর্থপাচারও কমবে। অস্ত্র, গোলাবরুদ কিংবা বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য এনে কেউ খালাস করতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় অঘোষিত ও বিস্ফোরকজাতীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি নিরাপত্তাঝুঁকি কমাতে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, প্রতি বছর কাস্টম ডে এলেই বন্দরের প্রতিটি গেটে কন্টেনার স্থাপন করার কথা বলা হয়। এটি শুনে আসছি অনেক বছর ধরে। কিন্তু বাস্তবে এখনো ৭ গেটে স্ক্যানার নাই। প্রতিটি গেটে স্ক্যানার থাকলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও দ্বিগুণ তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) একেএম সুলতান মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। তবে বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার স্থাপনের বিষয়টি এনবিআরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখছেন। আমি যতটুুকু জানি নতুন স্ক্যানার কেনার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ আছে।
অপরদিকে গত ২০১৬ সালের মার্চে বন্দরের প্রতিটি গেটে স্ক্যানার মেশিন বসানোর পাশাপাশি আলাদা স্ক্যানিং বিভাগ চালুর উদ্যোগ নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সেই সময় এনবিআরে এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব কাঠামো পাঠানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, স্ক্যানিং বিভাগের জন্য ১৮৩ জন লোকবল নিয়োগ, ১২টি গেটের জন্য ১২টি স্ক্যানার মেশিন, ১০টি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র, ৭টি মাইক্রোবাস, ৩৭টি কম্পিউটার সিসিটিভিসহ বিভিন্ন জিনিসের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া স্ক্যানিং বিভাগের কন্টেনার স্ক্যানিং ও বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র পরিচালনার জন্য একজন অপারেশন ম্যানেজার, একজন কম্পিউটার অপারেশন সুপারভাইজার, একজন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিটি বিস্ফোরক পদার্থ শনাক্তকারী যন্ত্র পরিচালনার জন্য ২ জন কম্পিউটার অপারেটর ও ২ জন ট্রাফিক কো-অর্ডিনেটর (সমন্বয়কারী) পদ রাখা হয়েছে। মোট ৮০ জন কম্পিউটার অপারেটর ও ৮০ জন ট্রাফিক কো-অর্ডিনেটরসহ পুরো বিভাগে মোট ১৮৩ জন ৪ শিফটে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৪ বছরেরও বেশি সময়। আলাদা স্ক্যানিং বিভাগ গঠিত হলে বন্দরের সেবাগ্রহীতারা উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।