প্রশাসনের অভিযানের জেরে টানা দুইদিন যাবত বন্ধ রয়েছে নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজারের আলুর আড়ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে পাইকারি পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত ৩০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছিল না। এরমধ্যেই গত মঙ্গলবার প্রশাসন সরকারি নির্দেশনা না মানার দায়ে রেয়াজুদ্দিন বাজারের ১০টি আলুর আড়তকে জরিমানা করে। তাই মুন্সিগঞ্জের বেপারীরা রেয়াজুদ্দিন বাজারে আর আলু সরবরাহ দিচ্ছেন না। অথচ রেয়াজুদ্দিন বাজার ছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, স্টিলমিল ও অক্সিজেন বাজারেও আলুর আড়ত রয়েছে। সেখানে অভিযান না থাকায় বেপারিরা ওইসব জায়গায় আলু সরবরাহ দিচ্ছেন। আড়তদাররা কমিশনে আলু বিক্রি করেন। তারা চাইলে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। অন্যদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল এক প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রেয়াজুদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতি। সমাবেশে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী বলেন, ‘আলুর মূল্য বৃদ্ধির জন্য শুধুমাত্র রেয়াজুদ্দিন বাজারের আলুর আড়তদারেরা দায়ী নয়। মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লায় কোল্ড স্টোরে মজুদ রেখে বেপারীরা সরবরাহ কম করায় বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের একতরফা অভিযান, জরিমানা এবং বেপারীরা আলু সরবরাহ না করায় বর্তমানে বাজারের অনেক আড়ত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী শ্রমিকেরা বেকার হয়ে আর্থিকভাবে ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছেন।’ তাই কুমিল্লা এবং মুন্সিগঞ্জ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা এবং বেপারীদের আলু সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
রেয়াজুদ্দিন বাজারের কয়েকজন আড়তদার জানান, অভিযান যদি পরিচালনা করতে হয়, তাহলে মূল গোড়ায় অভিযান চালানো হোক। রেয়াজুদ্দিন বাজার কিংবা চাক্তাই খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সরকার বলেছে, কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৭ টাকা রাখার জন্য। কিন্তু সেখান থেকে আড়তদারদের কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে।
আলুর পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে গেছে, গতকাল নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। সেই আলু খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়।
অপরদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সারাদেশে ডিসিদের চিঠি দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার দু’দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলায় কী পরিমাণ আলু মজুদ আছে সেই তথ্য দিতে বলা হয়। অন্য বছর হয়তো কোনো হিমাগার একশত টন আলু সংরক্ষণ করতো। এবার একই হিমাগার যদি দুইশত টন আলু মজুদ করে রাখে তবে তার বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন।
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্তাদের সাথে আলু ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন।