নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও দায় পেয়েছে উচ্চ আদালতের গঠন করে দেওয়া অনুসন্ধান কমিটি। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্বৃত্তরা সংগঠিত হয়ে এই ধরনের কাজ করছে। অনুসন্ধান কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা এবং চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. মহিউদ্দিন শামীমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক প্রতিবেদনের বেশ কিছু অংশ পড়ে শোনান। এসময় আদালতে যুক্ত ছিলেন ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন রেজা-ই রাকিব।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে অনুসন্ধান কমিটি। সে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ধরনের গ্রুপ বা বাহিনী গড়ে উঠছে। এই বাহিনীগুলোর ক্ষমতার উৎসই হচ্ছে এই রাজনৈতিক ছত্রছায়া। এই গ্রুপ বা বাহিনীগুলো সমাজে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ, অপরাধের জন্ম দিচ্ছে। জীবনের স্বাভাবিকতা থেকে সরে এসে এরা চরম নৃশংস হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, হাই কোর্ট কমিটির কাছে পাঁচটি বিষয় জানতে চেয়েছিল। ওই নারীর নিরাপত্তা, জবানবন্দি নেওয়া, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কোনো অবহেলা ছিল কি না? কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ছিল। ওই নারী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের (মেম্বার) কাছে অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু ওই সদস্য তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর ওই সার্কেলের এএসপি ও বেগমগঞ্জ থানার ওসির বিষয়ে বলা হয়েছে, তাদের এ ঘটনা না জানার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশের নিজস্ব সোর্স থাকে। সোর্স থাকার পরও কেন পুলিশ জানতে পারবে না, তা কমিটির বোধগম্য হয়নি। এটি পুলিশ প্রশাসনের অবহেলা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে, বলেন অ্যাডভোকেট মামুন।
ভুক্তভোগী নারীর বাবার দায় নিয়ে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরে এ আইনজীবী বলেন, অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, ওই নারীর বাবা অনেক কিছুই জানতেন। কিন্তু দেলোয়ার বাহিনীর হুমকিতে ভয়ে তিনি কাউকে কিছু জানাননি। একারণে বাবার কোনো অবহেলা বা দায় খুঁজে পায়নি তদন্ত কমিটি। দাম্পত্য কলহের কারণে বাবার বাড়িতে থাকা ওই নারীর ওই নারীর স্বামীর ভূমিকাও উঠে এসেছে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে। মামুন বলেন, স্বামীর বিষয়ে বলা হয়েছে, ওই নারীর সাথে গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে তার যোগাযোগ ছিল না। ঘটনার চার-পাঁচদিন আগে ওই নারীর সাথে তার যোগাযোগ হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেলোয়ার বাহিনীর সাথে তার (ওই নারীর স্বামীর) যোগাযোগ থাকার পরও সবকিছু জেনেও সে নিষ্ক্রিয় ছিল। ভিডিওর বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, এটি করা হয়েছিল ওই নারী অনৈতিক কার্যকলাপে যুক্ত প্রমাণ করার জন্য।