যে কোনো মুহূর্তে ঘোষণা হতে পারে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। গুঞ্জন রয়েছে, আগের কমিটির প্রায় শতাধিক নেতার স্থান হচ্ছে না এবার। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সংগঠনটির চট্টগ্রামের সাবেক নেতাদের। অবশ্য বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভেতরে ভেতরে পদ পেতে তদবির করছেন তারা। সাবেকদের পাশাপাশি নগর যুবলীগের অনেক নেতাও আছেন তদবিরকারীদের তালিকায়। আছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাও।
যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগেই ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে কমিটির খসড়াও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সবুজ সংকেত পেলে যে কোনো মুহূর্তে ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে নভেম্বর মাসের আগেও কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনের চেয়ারম্যান করা হয় শেখ ফজলে শামস পরশকে। একই সঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান মাইনুল হোসেন খান নিখিল। গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর প্রেক্ষিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ এক নেতা জানান, সম্প্রতি ১৭১ সদস্যের একটি খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জমা দেন যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিতর্কিত কাউকে কমিটিতে না রাখাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। এর প্রেক্ষিতে খসড়া আরো অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে। তবে দুয়েকদিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারো জমা দেয়া হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলেই তা ঘোষণা করা হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের এক নেতা জানান, পূর্বের কমিটিতে ছিলেন এমন প্রায় শতাধিক নেতা এবার বাদ পড়ছেন। এর মধ্যে অনেক বিতর্কিত নেতাও আছেন। পাশাপাশি বয়সের কারণেও বাদ পড়বেন অনেকে। কেউ কেউ আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছেন। তাদেরও রাখা হবে না কমিটিতে।
এদিকে পূর্বের কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে ১২ জনের অধিক বিভিন্ন পদে ছিলেন। এর মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বদিউল আলম বদি, প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আলতাফ হোসেন বাচ্চু ও সৈয়দ মাহমুদুল হক, উপ-কৃষি ও সমবায় সম্পাদক পদে মীর মহিউদ্দিন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে শহীদুল হক রাসেল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া বিভিন্ন পদে ছিলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নওশাদ মাহমুদ রানা, দেবাশীষ পাল দেবু ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এদের বেশিরভাগই সম্ভাব্য কমিটিতে আসার জন্য তদবির করছেন। তবে পূর্বের কমিটি থেকে বাদ দেয়া হলে এদের বেশিরভাগই বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে নতুন করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের পদ পেতে তদবির করছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী, সাইফুল আলম লিমন, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন, রাশেদ খান মেনন, এ কে এম শহীদুল কাওসার, শাখাওয়াত হোসেন স্বপন, মুজিবুর রহমান স্বপন ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীগ্রই কেন্দ্রীয় যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। বিগত কমিটিতে চট্টগ্রামের যারা ছিলেন তাদের কারো বদনাম ছিল না। সবার সুনাম ছিল। সুষ্ঠুভাবে সবাই দায়িত্ব পালন করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন কমিটিতে যারা আসবেন তারা অবশ্যই যোগ্যতা বলে আসবেন। যোগ্যতা অনুযায়ী আসলে অবশ্যই চট্টগ্রাম থেকে অনেকে স্থান পাবেন। সাবেক এ যুবলীগ নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর যে চেষ্টা যুবলীগের মধ্যেও তার প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।
নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, অতীতে চট্টগ্রাম থেকে দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, জয়েন সেক্রেটারি, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। এবারও প্রত্যাশা রয়েছে পূর্বের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম থেকে মূল্যায়ন করা হবে। অবরোধ বিরোধী আন্দোলন, মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন; সর্বোপরি যারা সংগঠনকে ভালোবাসেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে।