বদলি আতঙ্কে ভুগছে পুলিশ। সিএমপি কিংবা চট্টগ্রাম রেঞ্জই শুধু নয়, এ আতঙ্ক বিরাজ করছে দেশের সর্বত্র। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বলছেন, বদলি পুলিশের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এ বদলি প্রক্রিয়াকে তারা ‘শুদ্ধি অভিযান’ বলতে রাজি নন। তবে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বদলি আতঙ্কে স্বাভাবিক কাজে স্থবিরতা নেমে আসছে। নগরী ও জেলার একাধিক থানার ওসিদের সাথে কথা বলতে চাইলে তাঁরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। যেটুকু জানা গেল, তারা আতঙ্কে আছেন, আগামীকাল সকালে থানায় গিয়ে নিজের চেয়ারটায় বসতে পারবেন কিনা এ ভয়ে। মাঠ পর্যায়ের অবস্থা আরো করুণ। ঘটনা ঘটার পর পুলিশ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করছে হয়তো, কিন্তু অপরাধী ধরা পড়ার আগে যা ঘটার তা ঘটেই যাচ্ছে। অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের ভূমিকা হতাশাজনক।
তাদের অভিমত, মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে সফলতার পাশাপাশি সুনাম যেমন হবে, ঠিক তেমন দুর্নামও আসবে। কারণ উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট করা কখনোই সম্ভব নয়। সেই দুর্নামের কারণে যদি গণহারে বদলি করা হয়, তবে পুলিশের কাজের গতি মন্থর হতে বাধ্য। সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর সিএমপির ২০ জন এসআই এবং ৩০ জন এএসআইকে বদলি করা হয়। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ কথা মানতে নারাজ পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ। তাদের বক্তব্য, পেশাদার পুলিশ সদস্যরা যেখানেই যাবেন, একইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর সিএমপির দায়িত্ব নিয়েই পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তাঁর অধীনস্থদের কাছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সাথে অধীনস্থদের সম্পর্ক কাজের। তিনি পুলিশ সদস্যের যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেবেন। তিনি এও জানিয়েছেন, কোনো সদস্য অপরাধ করলে তার দায় পুলিশ বাহিনীর নয়। অন্যদিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে যোগদান করেই মো. আনোয়ার হোসেন চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবেই হোক করোনাকালে পুলিশের যে গৌরব অর্জিত হয়েছে তা কিছুতেই ভূলুন্ঠিত হতে দেবেন না। পেশাদার পুলিশ বাহিনী গঠনের প্রয়াস এ বদলি। এটাকে শুদ্ধি অভিযান বলতে চান না তিনি।
প্রসঙ্গত, করোনাকালে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মানবিক হিসেবে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। ইতোমধ্যে বেপরোয়া পুলিশ সদস্যদের লাগাম টেনে ধরা, দীর্ঘদিন ধরে এক এলাকায় চাকরি করা পুলিশ সদস্যদের অন্যত্র বদলিসহ বিভিন্নভাবে পুলিশকে পেশাদার করার চেষ্টা চলছে। ফলে নতুন কর্মকর্তাগণ সিএমপি বা রেঞ্জের বিভিন্ন থানায় যোগদানের পর এলাকা চেনা, সোর্স গড়ে তোলা এবং অপরাধী শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে বেগ পেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এখন পুলিশ সদস্যরা রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া বাড়তি কোনো কাজই করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্ধ রয়েছে মাদক কিংবা অস্ত্র উদ্ধারে বড় অভিযান। গত সোমবার সিএমপির এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, হয়তো সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। ক’দিন পর ঠিক হয়ে যাবে। সাময়িক সমস্যা কী ধরনের জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে হাটহাজারী সার্কেলের আওতাধীন থানায় যোগাযোগ করেছিলাম। কারণ আসামিরা ওখানকার। কিন্তু কেউ কিছুই জানাতে পারলো না। পরে দেখলাম- থানার অফিসারদের অধিকাংশই দেড় থেকে দুই মাস হচ্ছে, ঐ থানায় যোগ দিয়েছেন। যে কারণে তারা এলাকা ঠিকমতো চিনে উঠতে পারেননি। কোনো সোর্স গড়ে উঠেনি। তবে তিনি আশাবাদী, শীঘ্রই এ সংকট কেটে যাবে।