কাস্টম হাউসে যাত্রা শুরু ই-অকশনের

‘ঘরে বসে নিলাম নতুন দিগন্ত’

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

আনুষ্ঠানিকভাবে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক প্রধান অতিথি হিসেবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অনলাইন নিলাম কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর আগে কাস্টমসের কনফারেন্স রুমে ই-পেমেন্ট সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, ই-পেমেন্টের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ হলে জাল জালিয়াতি অনেকাংশে কমে আসবে। ট্রেজারি চালান জাল করে পণ্য খালাস করার ঘটনা আমরা দেখেছি। কাস্টম হাউসের কার্যক্রম ডিজিটালাইলেজশন করার প্রতি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এর অংশ হিসেবে অনলাইন নিলাম শুরু করছি। অনলাইন নিলামে একজন বিডার ঘরে বসে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এটি একটি নতুন দিগন্ত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির চেষ্টা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জালিয়াতি চক্রটি নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করবে-এটিই স্বাভাবিক। তারা অতীতেও ছিল, বর্তমানে আছে, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করেও চক্রটির শেষ রক্ষা হয়নি। কাস্টমসের দক্ষ কর্মকর্তারা ঠিকই আটকে দিয়েছে।
কাস্টমসের সার্ভারের ধীরগতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কয়েকজন নেতা। এ প্রসেঙ্গ মাসুদ সাদিক বলেন, কাস্টম হাউসে ১৯৯৪ সাল থেকে অ্যাসাইকুডা সিস্টেম চালু হয়েছে। ধাপে ধাপে অ্যাসাইকুডা প্লাস প্লাস, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ডে এখন আমরা কাজ করছি। ২০১৩ সালে সার্ভার কেনা হয়েছে। এখন ২০২০ সাল। আরও আগে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করা দরকার ছিল। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। শিগগির নতুন সার্ভার, অন্যান্য হার্ডওয়্যার পেয়ে যাব।
তিনি বলেন, কাস্টমস সব সময় ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাস্টমসের যে নিবিড় সম্পর্ক, সরকারের অন্য কোনো বিভাগের সঙ্গে তা আছে কিনা আমার সন্দেহ। সারা দিনে একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ২০টি বিল অব এন্ট্রির মধ্যে ১টিতে সমস্যা হলে তা বলে বেড়ান। বাকি ১৯টির কথা বলা মানুষের স্বভাবের অংশ নয়। কিছু বিলম্ব, কিছু বিড়ম্বনা সিস্টেমের কারণে থাকে। অটোমেশন যে পর্যায়ে যাওয়ার কথা ছিল যায়নি। সব মডিউল চালু হলে কাজ দ্রুত হতো। বিল অব এন্ট্রি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমি ২০১২-১৫ পর্যন্ত কমিশনার ছিলাম। তখন প্রতিদিন ৪ হাজার বিল অব এন্ট্রি হতো। এখন ৭ হাজার অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু আমাদের অফিসারদের বসার জায়গা, ট্রেনিং, হার্ডওয়্যার সেভাবে বাড়েনি। কাজের দক্ষতা বাড়ায় অনিষ্পন্ন থাকছে না। এটা আরও ইমপ্রুভ করার সুযোগ আছে। সেই লক্ষ্যে ডিজিটালাইটেশন। জনবল বাড়ানোর চেয়ে অটোমেশনে জোর দিচ্ছি।
কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। কারণ করোনা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক মহামারী। যে ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন, তারা যে পরিমাণ পণ্যের এলসি খুললে লক্ষ্যমাত্রা আদায় হতো সেখান থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। দেশে চাহিদা থাকলে তার ভিত্তিতে আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়। মার্কেট বন্ধ ছিল, ভোক্তারাও নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া পণ্য কেনেননি। ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি স্লো হয়ে গিয়েছিল। এখন পুরো দেশ অর্থনৈতিক গতি ফেরত পাচ্ছে। আমরা আশাবাদী, সামনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নূর রাশেদ আহমেদ, যুগ্ম কমিশনার মো. তাফছির উদ্দিন ভূঞা, মুহাম্মদ মাহবুব হাসান, মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ বাপ্পী শাহরিয়ার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আবদুল্লাহ জহির, বিজিএমইএর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন ও বিকেএমইএর শওকত ওসমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফার্নেস অয়েল যখন বিপিসির মাথাব্যথা
পরবর্তী নিবন্ধ৪৬ বছর পর প্রথম জুলুসবিহীন মিলাদুন্নবী (দ.)