নানা জটিলতায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদসহ বিভিন্ন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অধিদপ্তরের কার্যক্রম। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় বাড়ছে বেকারত্ব। খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদসহ প্রায় ২৬টি বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত। এসব বিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদ সমূহে নিয়োগ দেয় জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সর্বশেষ নিয়োগ হয়েছিল ২০১২ সালে। আট বছর পেরিয়ে গেলেও এই অধিদপ্তরে আর নিয়োগ হয়নি। কয়েকটি বিভাগে লিখিত পরীক্ষার পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও মৌখিক পরীক্ষা হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রাণীসম্পদসহ বিভিন্ন বিভাগে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৯ শতাধিক। চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন চাকরি প্রার্থীরা। তাদের কেউ কেউ আবেদন করেছিলেন তিন বছর আগে। কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী জানান, চাকরির জন্য আবেদন করেছি তিন বছর আগে। কিন্তু এখনো নিয়োগ হয়নি। পড়াশোনা শেষ করার পর আমরা বেকার বসে আছি। হতাশায় ভুগছি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ প্রায় ৭ বছর ধরে বন্ধ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির শূন্য পদের সংখ্যা ২১০টি। স্বাস্থ্য বিভাগের মতো গুরত্বপূর্ণ বিভাগের নিয়োগ বন্ধ থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীরা। দ্রুত জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়ে সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি দাশ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। শূন্যপদে নিয়োগের জন্য জেলা পরিষদকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত নিয়োগ হলে স্বাস্থ্য বিভাগের সেবার আওতা বাড়বে।
জেলায় সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায়। এতে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ২০১৭ সালে ১ম পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের পর একই বছরের ৩ অক্টোবর ১৮৬টি শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা পরিষদ। তিন বছর ধরে ঝুলে আছে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া। বর্তমানে জেলার ৫৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ৪২২টি। বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক সংকট চলছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠদান ব্যাহত হয়। জেলা পরিষদ শিক্ষক নিয়োগ করলে সংকট দূর হবে।
আট বছর ধরে জেলার নিয়োগ বন্ধ রয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। এই অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০৬টি পদের মধ্যে শূন্যপদ ৭৬টি। ২০১৯ সালে সেপ্টম্বরে ১১৪টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মর্তুজ আলী বলেন, ৮ বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে নিয়োগ না হওয়ায় আমাদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জেলা পরিষদ নিয়োগ দিলে আমাদের কাজে গতি ফিরবে। আশা করছি অতি শীঘ্রই শূন্য পদে নিয়োগ হবে।
২০১৯ সালে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির পদে নিয়োগের জন্য লিখিত প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। দেড় বছরের বেশি সময় পার হলেও সেই পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। জনবল সংকটের কারণে চরম বিপাকে জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আফসার জানান, জনবল সংকটে জেলা উপজেলা পর্যায়ে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখন প্রায় ৩৮টি শূন্যপদ রয়েছে। লোকবলের অভাবে মনিটরিং কাজগুলো হচ্ছে না। দেড় বছর আগে লিখিত পরীক্ষা হলেও এখনো মৌখিক পরীক্ষা হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভাগসমূহে নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আমরা কয়েকটি বিভাগে নিয়োগের জন্য অনুমোদন চলতি মাসের মধ্যে পাব। কয়েকমাসের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হবে।