আলুর বাজারে সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। এখনো কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি এবং খুচরা বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। এর আগে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে গত ২০ অক্টোবর আলুর দাম পুনর্নির্ধারণ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ওইদিন ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে।
গতকাল চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুইদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলুর দাম ২ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায়। অন্যদিকে কাজীর দেউরির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের মতোই কেজি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু্্। খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান জানান, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকায় আমরা আলু বিক্রি করতে পারছি না। পাইকাররা যদি ৩০ টাকায় আমাদের কাছে বিক্রি করেন, আমরা অবশ্যই ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারব। চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের বাজারে মুন্সিগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং রংপুর থেকেই সবচেয়ে বেশি আলু আসে। তবে বর্তমানে জয়পুরহাট এবং রংপুর থেকে আলু কম আসছে। মুন্সিগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজ থেকে আবার আমাদের চাহিদা মতো আলু আসছে না। দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের বাজারে প্রতিদিন ২০ ট্রাক আলুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে বাজারে আলু পাঠাচ্ছেন ৮-১০ গাড়ি। আমরা দুই এক টাকা লাভ করে ছেড়ে দিই। এখানে আড়তদারদের কারসাজি করার কোনো সুযোগ নেই। সরকার পাইকারি বাজারে ৩০ টাকায় আলু বিক্রি করতে বলছে। কিন্তু আমরা তো ওই দামে কিনতেও পারছি না। তাই অভিযান যদি চালাতে হয়, মূল গোড়াতেই চালাতে হবে। আড়তে অভিযান চালিয়ে আসলে কোনো লাভ নেই। উল্টো ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের পর এবার শুরু হয়েছে আলু নিয়ে কারসাজি। অথচ দেশে কখনো আলুর সংকট ছিল না। আমাদের দেশে সব সময় আলুর বাম্পার ফলন হয়। কিন্তু আমাদের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী আলুর চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বৃদ্ধি করে ক্রেতাদের পকেট কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। প্রশাসনও এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে না। ব্যবসায়ীরা এখন অজুহাত দাঁড় করিয়েছে, করোনাকালে প্রচুর পরিমাণ আলু ত্রাণ হিসেবে চলে যাওয়ায় আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া আগের বছরের চেয়ে আলু বেশি রপ্তানি হয়েছে এমন দাবিও করছেন তারা। মূল কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই প্রশাসনকে অভিযান চালানোর মাধ্যমে বাজার স্থিতিশীলতা আনতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোর রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্তাদের সাথে আলু ব্যবসায়ীদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন।