বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গতকাল রোববার প্রকল্প পরিচালক এই দরপত্র আহ্বান করেন। টেন্ডার জমাদানের শেষ দিন এবং ওপেনিং ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি। দরপত্র গ্রহণের পর মূল্যায়ন কাজ শেষ করে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হবে।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করেছি। চলতি আর্থিক সালের মধ্যে ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করার ব্যাপারে প্রস্তুতি আছে। স্যুয়ারেজ জটিল প্রকৃতির কাজ। এই কাজের জন্য সরকারি সেবা সংস্থা এবং জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। স্যুয়ারেজ প্রকল্প প্রথমবারের মতো হচ্ছে। তাই সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। দরপত্র গ্রহণের পর মূল্যায়ন কাজ শেষ করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণ করা হবে।
স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করা মাস্টার প্ল্যানের আলোকে মহানগরীকে ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে একটি জোনে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রথমে হালিশহর জোনের কাজ শুরু হচ্ছে। অপর ৫টি জোন হলো কর্ণফুলী নদীর তীরে ৩টি, আরেফিন নগরে ১টি এবং ফতেয়াবাদে ১টি। প্রথম ধাপে এই প্রকল্পে একটি পয়ঃশোধনাগার স্থাপনের মধ্যদিয়ে ২০ লাখ নগরবাসীর পয়ঃবর্জ্য স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৮০৮ কোটি টাকা। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।
হালিশহরে ওয়াসার ১৬৩ একর জায়গা রয়েছে। তবে এই জায়গা রেলওয়ের বলে দাবি করছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জমি তাদের। ওই জায়গায় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন করা হবে। এর মাধ্যমে বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হবে। অবশিষ্ট কঠিন বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হবে। এর জন্য তৈরি হবে দিনে ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার একটি পয়ঃশোধনাগার এবং দিনে ৪৫০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার একটি ফিকেল স্ল্যাজ শোধনাগার।
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, শুরুতে আমরা একটি জোনে এই কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি। অবশিষ্ট পাঁচটি জোনে ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। স্ল্যাজ সংগ্রহে যেখানে পাইপলাইন স্থাপন করা যাবে না, সেখানকার জন্য গাড়ি সংগ্রহ করা হবে। গাড়িতে করে বর্জ্য হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হবে।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালে। এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, স্যানিটেশন ফ্যাসিলিটিস নির্মাণের মাধ্যমে নগরবাসীর জন্য পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অবশিষ্ট ৫টি পয়ঃশোধনাগার বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে।