নির্বাচনী সমাবেশে একে অপরকে কটাক্ষ ট্রাম্প-ওবামার

| শুক্রবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জমে ওঠা প্রচারণার মধ্যে পৃথক দুটি নির্বাচনী সমাবেশে একে অপরের প্রতি তীব্র বাক্যবাণ ছুড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার পূর্বসূরী বারাক ওবামা। পেনসিলভানিয়ায় ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে প্রচারণায় নামা ওবামা গত বুধবার ট্রাম্পকে ‘পাগলা মামা’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদীদের সাফল্য এনে দিয়েছেন। আর নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে ট্রাম্প ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে পূর্বসূরীর ভুল অনুমান নিয়ে টিটকারি করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। নির্বাচনের মাত্র ১৩ দিন আগে সব জনমত জরিপে ট্রাম্পকে বাইডেনের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে। খবর বিডিনিউজের।
তবে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য। এ রাজ্যগুলোর ভোটের ফলের উপরই ৩ নভেম্বরের ভোটে জিতে কে হোয়াইট হাউসের দখল পাবেন তা নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্রে এবার রেকর্ড আগাম ভোটও পড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এরই মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ ভোটার ডাকযোগে ও আগাম ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের রায় জানিয়ে এসেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় গ্যাস্টোনিয়ার সমাবেশে ট্রাম্পের ছোড়া বেশিরভাগ তীরেরই লক্ষ্য ছিল বাইডেন। ভোটারদেরকে এবার ট্রাম্পের দ্রুত-পুনরুত্থান কিংবা বাইডেনের চরম মন্দার মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে, বলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার টেনেসির ন্যাশভিলে শেষ মুখোমুখি বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে বাইডেন চলতি সপ্তাহের সব প্রচারণা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন; অন্যদিকে ট্রাম্পকে দেখা যাচ্ছে ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত রাজ্যগুলোতে ছুটে বেড়াতে। নর্থ ক্যারোলাইনার সমাবেশে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তার পূর্বসূরী ওবামাকে খোঁচা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ট্রাম্পের সমাবেশের ঘণ্টাখানেক আগেই ওবামা আগস্টের ডেমোক্র্যাট কনভেনশনের পর প্রথমবারের মতো বাইডেনের পক্ষে কোনো সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
‘কুচুটে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে ওবামার চেয়ে বেশি তো আর কেউ প্রচারণা চালায়নি। তাই না? সেসময় তিনি সব জায়গায় ছিলেন। আমার মনে হয় সে রাতে (নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত হওয়ার পর) কুচুটে হিলারির চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন বারাক হুসেইন ওবামা, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সময় তার সমর্থকদের হিলারিকে উদ্দেশ্য করে দুয়ো দিতে দেখা গেছে।
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তার বক্তব্যে বাইডেনের মনোনয়ন দৌড়ে নামার শুরুর দিকে ওবামার উচ্ছ্বাসের ঘাটতির প্রসঙ্গ টেনেও টিটকারি দেন। বাইডেন ওবামার আমলে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৬ সালে বাইডেনকে চাপ দিয়ে মনোনয়ন দৌড় থেকে সরিয়ে ওবামাই হিলারিকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল। ট্রাম্পকে হারাতে বাইডেনের চেয়ে হিলারির সুযোগ বেশি বলেই সেসময় মনে করেছিলেন তিনি। গত বছর ওবামা ডেমোক্র্যাট পার্টিতে নতুন রক্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার এ মন্তব্যকে বাইডেনের প্রতি অনাস্থা হিসেবেও অনেকে বর্ণনা করেছিলেন। বুধবার পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বেহাল দশা ও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার সমালোচনার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন টুইট নিয়েও কটাক্ষ করেছেন।
‘বাইডেন জিতলে আমাদের এমন প্রেসিডেন্ট থাকবে না যে তাকে সমর্থন না করায় কাউকে অপমান করবে বা জেলে ঢোকানোর হুমকি দেবে। এটা প্রেসিডেন্টের স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে না, বলেন ডেমোক্র্যাট পার্টির মধ্যে এখনও তুমুল জনপ্রিয় সাবেক এ প্রেসিডেন্ট।
ভোটাররা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকেও এমন আচরণ সহ্য করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কেবল কোথাও কোথাও হয়তো ক্রেজি আঙ্কেলের ক্ষেত্রে এমনটা (আচরণ সহ্য) হতে পারে, বলেছেন ওবামা। এরপরও কেন অনেকে এ বিষয়ে অজুহাত দেয়? ও, আচ্ছা, এটা কেবল মাত্র তিনি বলে। না, এটা কেবল তিনি নন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া আছে। এগুলো অন্যান্য মানুষকে নির্দয় হতে উৎসাহিত করে। উৎসাহিত করে বিভেদ সৃষ্টিকারী হতে, বর্ণবাদী হতে। এটি আমাদের সমাজের বুননকে নষ্ট করে দেয়। এইসব আচরণই কারণ, এইসব চরিত্রই কারণ, বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, হুট করেই আমাদের সবাইকে রক্ষা করতে পারবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এমনকি নিজের সুরক্ষার প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোও নিতে ব্যর্থ হয়েছন। ট্রাম্পের প্রতি ওবামার এসব আক্রমণাত্মক কথাবার্তার সময় কার পার্কিংয়ে থাকা ২৮০টি গাড়ির প্রায় সবগুলোই হর্ন বাজিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের কথায় সমর্থন জানায়।
বাইডেনের হয়ে প্রচারণায় অংশ নিতে ওবামা এরপর নভেম্বরের নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য ফ্লোরিডায় যাবেন। শনিবার মিয়ামিতে এবং পরের সপ্তাহে অরল্যান্ডোর প্রচার সমাবেশেও তার অংশ নেওয়া করার কথা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারাফটকে বিয়ে তারপর জামিন
পরবর্তী নিবন্ধমৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হয়েছে যুদ্ধাপরাধী কায়সারকে