থাপ্পড়ের প্রতিশোধে খুন

যেভাবে ধরা পড়ল কিশোর খুনি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ অক্টোবর, ২০২০ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

চলার পথে ধাক্কা লাগায় মো. ফয়সালকে (১৬) থাপ্পড় দেয় হালিশহরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান লিটন (৫০)। অসাবধানতাবশত ধাক্কা লাগলেও দোষারোপ করে লিটনের থাপ্পড় দেয়ার বিষয়টাকে সহজভাবে নিতে পারেনি ফয়সাল। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নেয়ার। শেষ পর্যন্ত একা পেয়ে লিটনকে খুনও করে ফেলে।
হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে গত ১৪ অক্টোবর দিবাগত রাতে। পুলিশ ওইদন রাত দেড়টায় হালিশহর আবাসিক এলাকার এ-ব্লকে আর্টিলারি সেন্টার মাঠের পাশে খালপাড় থেকে লিটনের লাশ উদ্ধার করে। তবে হত্যাকারী কে সেটা ছিল অজানা। শেষ পর্যন্ত গত ১৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে ফয়সালকে গ্রেপ্তারের পর জট খুলে এ হত্যাকাণ্ডের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্বীকার করে পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দেয় ফয়সাল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, হালিশহরের গলাচিপা পাড়া বাসা থেকে ফয়সালকে গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরিটিও জব্দ করা হয়। সে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে গিয়েই মিজানুর রহমানকে খুন করে। পুলিশ জানায়, ফয়সাল (১৬) কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী এলাকার করিমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে হালিশহর থানার গলাচিপা পাড়ায় বসবাস করে আসছিল। তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। মাও দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে বুয়ার কাজ করে। মায়ের সাথে থাকে ফয়সাল। যখন যে কাজ পায় দিনমজুর হিসেবে সে কাজ করে ফয়সাল।
হালিশহর থানা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে লিটনের লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এসময় তার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। লিটন হালিশহর থানার রহমানবাগ আবাসিক এলাকার অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এম এ লতিফের বড় ছেলে। একসময় আগ্রাবাদ এঙেস রোডে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করলেও সর্বশেষ জমি বিক্রির মধ্যস্থতা করা শুরু করে সে।
যেভাবে ধরা পড়ে ফয়সাল : পুলিশ জানায়, লিটনকে খুন করার পর থেকে অস্থির হয়ে ওঠে ফয়সাল। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছিল না। কেমন উদাসীন হয়ে পড়ে। ঠিকমতো ঘুমুতে পারছিল না। এমনকি খেতেও পারছিল না। হঠাৎ ছেলের এ পরিবর্তন দেখে কারণ জানতে চায় তার মা। কিন্তু কিছুতেই সে কিছু বলবে না। পরে জোরাজুরি করার পর মায়ের কাছে লিটনকে খুন করার বিষয়টি স্বীকার যায়। ছেলের মুখে খুনের বর্ণনা শুনে এবার অস্থির হয়ে ওঠে মাও। কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। পরে যে বাসায় কাজ করে ওই বাসার গৃহকর্তাকে ঘটনা খুলে বলে সাহায্য চায়। সেখান থেকেই বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে খবর পেয়ে ফয়সালকে গত সোমবার দিবাগত রাতের হালিশহরের গলাচিপা পাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কি হয়েছিল সেদিন : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়সাল পুলিশকে জানায়, হত্যাকাণ্ডের আট-দিশ দিন আগে হালিশহর এ ব্লকে হাঁটতে বের হয় সে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা লিটনের সাথে ধাক্কা লাগে তার। তখন লিটন কেন ধাক্কা দিয়েছে জানতে চায়। একপর্যায়ে ধমকও দেয়। তখন ফয়সাল দাবি করে, সে ইচ্ছেকৃত ধাক্কা দেয়নি। এরপরও লিটন ফয়সালকে থাপ্পড় মারে এবং দেখে-শুনে পথ চলার জন্য সর্তক করে।
পুলিশকে ফয়সাল জানায়, দোষ না করলেও থাপ্পড় দেয়ায় অপমানবোধ করে সে। তাই সে বদলা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ঘটনার একদিন আগে (১২ অক্টোবর) এক বন্ধু থেকে ছুরি সংগ্রহ করে এবং সবসময় সেটা সাথে রাখে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন ফয়সাল হালিশহর গোডাউন বাজারে তার এক মামার বাসায় যায়। সেখানে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত ছিল। সেখান থেকে ফেরার পথে আর্টিলারি সেন্টার মাঠের পাশে কাকতালীয়ভাবে দেখতে পায় লিটনকে। এসময় তার পিছু নেয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর লিটনের পথরোধ করে থাপ্পড় দেয়ার কারণ জানতে চায় ফয়সাল। এসময় ফয়সালকে প্রথমে চিনতে পারেনি লিটন। একপর্যায়ে ফয়সাল ছুরি বের করে। এসময় লিটন ফয়সালের হাত ধরে ফেলে এবং ছুরিসহ পুলিশকে ধরিয়ে দিবে বলে জানায়। তখন আরো ক্ষেপে যায় ফয়সাল। এসময় ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে ফয়সালের হাতের আঙ্গুলও কেটে যায়। পরে এক পর্যায়ে লিটনকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় সে।
হালিশহর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় ভয়ে কাঁপছিল ফয়সাল। মনে হচ্ছিল সে স্ট্রোকই করেই ফেলবে। তাকে আমরা আশ্বস্ত করি, তার কোন ক্ষতি হবে না। এরপর সে ঘটনার বিবরণ দেয়। আমাদের জানিয়েছে, ঘটনার পরে সে তার বাড়ির সামনের একটি দোকানে এসে সারারাত বসেছিল। ছুরিটা কচুরিপনার ডোবার মধ্যে ফেলে দেয়। গায়ে পড়া শার্ট তার এক বন্ধুকে দিয়ে দেয়। আমরা ছুরি ও শার্ট উদ্ধার করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়ির দুই ইউনিয়নে ফল
পরবর্তী নিবন্ধভাতিজার কাছে চাচার পরাজয়