বিশ্বের ৪০ শতাংশ উদ্ভিদ বিপুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনাস কিউ-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় ২০ শতাংশ উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকিতে ছিল। বিপুপ্তির হুমকি সবচেয়ে বেশি রয়েছে ঔষধি বৃক্ষ। বন বাংলাদেশের কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। গত কয়েক দশকে উজাড় হয়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল বন। প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক বন। এছাড়া ক্রমাগত বসতি স্থাপনের কারণে বনের পরিমাণ কমেছে। বন থেকে উজাড় হয়েছে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাতৃবৃক্ষ। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বন ও অশ্রেণিভুক্ত বনেও কমেছে মাতৃবৃক্ষ। এতে হুমকিতে বনের পরিবেশ। বর্তমানে ১৮৫ প্রজাতির বৃক্ষ বিপন্ন, বিপন্নপ্রায় ও বিরল। তবে দেরিতে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে মাতৃবৃক্ষ সংরক্ষণ এবং বিপন্ন, বিপন্নপ্রায় এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙা সড়কের লাগোয়া রিছাং ঝরনা সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষের প্রথম জার্মপ্লাজম সেন্টার। এই সেন্টারের আয়তন প্রায় ৪৩ একর।
২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এটি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। বতর্মানে জার্মপ্লাজম সেন্টারে ৩৬ প্রজাতির বিপন্ন, বিপন্নপ্রায় ও বিরল প্রজাতির ৩ হাজার ২৭৯ বৃক্ষের চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রহেরা, হরিতকি, মাইলা আম, বুদ্ধ নারিকেল, অরমোসিয়া, মহুয়া, বক্সবাদাম, চিকারাশি, কড়ই, রেইনট্রি, সিভিট, বাটনা, বৈলা আম, পিটালি, কুসুম, রক্তচন্দন, জলপাই, উদাল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কানাইদিঙ্গা, নাগেশ্বরচাঁপা, পাদুক, ইউভেরিয়া, কাঞ্চন, কালাহুজা, বন পিতরাজ, জিয়াপাটি, ভূঁইয়া, বাউপাতা, পিতরাজ, চুওয়াংগ্রী, ভুদম, গর্জন ও কাজল ভাদি। জার্মপ্লাজম সেন্টারে ২১টি প্লট করা হয়েছে। প্রতিটি প্লটের আকার প্রায় ২ একর। বৃক্ষের পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ ও বেতের চারা রোপণ করা হয়েছে।
বিপন্ন উদ্ভিদ রক্ষার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আবাসন তৈরি, নানা অবকাঠামো নির্মাণের কারণে বনের পরিমাণ কমে গেছে। বনের উপর নির্ভর জীবনযাপন বিপন্ন। জার্মপ্লাজম সেন্টার বিপন্ন বৃক্ষ বিকশিত ও সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা জরুরি ছিল। এর মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
জার্মপ্লাজম সেন্টারে উদ্ভিদের পাশাপাশি পাখিবান্ধব বৃক্ষও রোপণ করা হবে। এ বিষয়ে আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাখির সংখ্যা কমছে। মূলত শিকারিদের উৎপাতের কারণে বন্যপ্রাণী ও অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। জার্মপ্লাজম সেন্টারে পাখিবান্ধব বৃক্ষরোপণ করা হলে পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে।
জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক আশীষ কুমার বড়ুয়া বলেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি কর্মসূচি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যে সমস্ত বৃক্ষ প্রজাতি ছিল, যেগুলো বিরল, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, সেসব প্রজাতি জার্মপ্লাজম সেন্টারে রোপণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৩৬ প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বন নিয়ে যারা গবেষণা করবেন তাদেরও সহায়ক হবে জার্মপ্লাজম সেন্টার। ভবিষ্যতে এখান থেকে বীজ ও চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যন নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার হলো বৃক্ষের জীবন জাদুঘর। আমাদের অনেকগুলো দেশীয় প্রজাতির গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। আরণ্যক ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮৫ প্রজাতির দেশীয় গাছ বিপন্ন। কিছু বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে পার্বত্য এলাকার বনাঞ্চলে একসময় ছিল এখন নেই, এসব বিপন্ন বৃক্ষ রক্ষার জন্য জার্মপ্লাজম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।