কেমন আছেন আটকা পড়া বাংলাদেশিরা

বসনিয়ার জঙ্গল

| সোমবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

দুই বছর আগে ওমান থেকে বসনিয়া এসেছেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইয়াসিন। স্বপ্ন ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমানো। তিনি এখন আটকে আছেন ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তের ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে। সেখান থেকে কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ক্রোয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। বার বার দেশটির পুলিশের হাতে আটকা পড়েন। পুলিশ তার সবকিছু রেখে তাকে আবারো বসনিয়া ফেরত পাঠায়।
ইয়াসিন বলেন, ওমান থেকে স্পিড বোটে করে ইরান এসে সেখান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসি আমি। গ্রিস থেকে আসি বসনিয়ায়। গত চার মাস ধরে এ জঙ্গলে আছি। সর্বশেষ গত তিন দিন আগে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি। সে সময় ক্রোয়েশিয়ার কিছুটা ভেতরে ঢুকেছিলাম। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই। পুলিশ আমার সবকিছু কেড়ে নেয়। শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়। খবর বিডিনিউজের।
বসনিয়ার জঙ্গলে বাংলাদেশিদের আটকে পড়ার বিষয়ে জানতে বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন ডয়চে ভেলের দুই সংবাদকর্মী। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশটির ক্রোয়েশিয়া সীমান্তবর্তী ভেলিকা ক্লাদুসা এলাকার একটি পাহাড়ের ঢালে কয়েকশ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। তীব্র শীত, খাবারের অভাব, পানির সংকটে অমানবিক জীবনযাপন করছেন তারা।
ভেলিকা ক্লাদুসায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে এসেছেন। পাড়ি দিয়েছেন দুর্গম পথ। সেখানে অবস্থানরতরা জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা খরচ করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।
সেখানে অবস্থানরতদের একজন বলেন, ১৮ থেকে ২০ লাখ খরচ করে এখানে এসেছি। বিভিন্ন দেশে দালালদেরকে এ টাকা দিতে হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাব আমরা।
মানবেতর জীবন : গাছের সাথে পলিথিন বেঁধে ভেলিকা ক্লাদুসার একটি পাহাড়ের ঢালে বানানো হয়েছে তাঁবু। সেখানে গাদাগাদি করে রাত কাটাচ্ছেন তারা। এমন বেশ কিছু তাঁবুতে অবস্থান কয়েকশ বাংলাদেশি। কর্দমাক্ত মাটিতে পাতলা পলিথিন বিছিয়ে নিজেদের থাকার আয়োজন করেছেন তারা। নেই পর্যাপ্ত খাবার কিংবা জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ভেলিকা ক্লাদুসায় একটি শরণার্থী ক্যাম্প থাকলেও সেখানে সবাইকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যক্ত কারখানায়।
নজর নেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর : কয়েকশ মানুষ বসনিয়ার এ জঙ্গলে মানবেতর জীবনযাপন করলেও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তাদের সহায়তায় তৎপর হতে দেখা যায়নি। এখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা জানান, মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কেউ কেউ কিছু খাবার আর চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে এলেও তা পর্যাপ্ত নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধত্বকের উপর বাঁচে ৯ ঘণ্টা!
পরবর্তী নিবন্ধ৭০০ কোটি টাকায় নতুন কারখানা গড়বে বিএসআরএম স্টিল