যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া সর্বশেষ সব জরিপেই রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রম্পের তুলনায় ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। কেবল জাতীয় পর্যায়ের জরিপে নয়, ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ কিংবা ‘সুইং স্টেট’গুলোতেও তার অবস্থান তুলনামূলক ভালো। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, কোনো কোনো ‘দোদুল্যমান রাজ্যে’ সাবেক এ মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে বলে বেশ কয়েকটি জরিপে ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। তাহলে কি বাইডেনই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? ৩ নভেম্বরের আগে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও বিভিন্ন জরিপের ফল, আগাম ভোট এবং নির্বাচনী তহবিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ, ডেমোক্র্যাট শিবিরের কর্মকর্তাদের স্বস্তি দিচ্ছে। খবর বিডিনিউজের। ডেমোক্র্যাটরা এবার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বিপুল পরিমাণ চাঁদা তুলেছে। আর্থিক দিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় ভোটের ঠিক আগের সপ্তাহগুলোয় বাইডেন তার প্রচারণা ও বার্তা দিয়ে রেডিও-টিভি ছেযয়ে ফেলতে পারবেন। নির্বাচনী বিশ্লেষকদের বেশিরভাগেরই বাজি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পক্ষে। নেট সিলভারের ফাইভথার্টিএইট ডট কম ব্লগ বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা দেখছে ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে ডিসিশন ডেস্ক এইচ কিউ বলছে, এ সম্ভাবনা ৮৩.৫ শতাংশ। অনেকের কাছেই এ সব যেন চার বছর আগের পুনরাবৃত্তি, যার শেষটা হয়েছিল ডেমোক্র্যাটদের ‘আশাভঙ্গের’ ভেতর দিয়ে।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সপ্তাহ দুয়েক আগেও হিলারি ক্লিনটনের জয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। অথচ শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই শেষ হাসি হেসেছিলেন। ট্রাম্পের আরেকটি ‘ওভার ট্রাম্পের’মধ্যে দিয়ে কি এবারও তাই ঘটতে যাচ্ছে?
তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাইডেন এরপরও যে ৫টি সম্ভাব্য কারণে হেরে যেতে পারেন, সেগুলো হচ্ছে-
আরেকটি অক্টোবর বিস্ময় : চার বছর আগে নির্বাচনের ঠিক ১১ দিন আগে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের পরিচালক জেমস কোমি অনেকটা হুট করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় হিলারির ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার ব্যবহারের ঘটনাটির তদন্ত নতুন করে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর পরের এক সপ্তাহ এ ঘটনা এবং এর সম্পর্কিত নানান বিষয় ছিল সংবাদ মাধ্যমে বড় খবর; যা ট্রাম্পের প্রচারাভিযানকেও দম ফেলার একটা সুযোগ এনে দিয়েছিল। চলতি বছরের নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৭ দিন; এবারও যদি কাছাকাছি ধরনের একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্প ঘটে যায়, তাহলে ট্রাম্পের কপাল খুলেও যেতে পারে।
জনমত জরিপে ভুল : যেদিন থেকে জো বাইডেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন – সেদিন থেকেই জাতীয় জনমত জরিপগুলোয় তাকে ট্রাম্পের চাইতে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের জরিপে কে এগিয়ে আছেন, শেষ পর্যন্ত তা অপ্রাসঙ্গিক। আর অঙ্গরাজ্য স্তরের জরিপেগুলোও ভুল প্রমাণিত হতে পারে।
বিতর্কে ট্রাম্প ভালো করলে : ট্রাম্প ও বাইডেনের প্রথম টিভি বিতর্ক নিয়ে হৈচৈ থেমে গেছে, কারণ ইতিমধ্যেই দুই সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেছে। জনমত জরিপগুলো বলছে, ট্রাম্পের ওই আক্রমণাত্মক ভাব, বাইডেনের কথায় বার বার বাধা দেয়া মফস্বলের নারীদের একদমই ভালো লাগেনি । এবারের নির্বাচনে মফস্বলের নারী ভোটারদের অংশকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প তাকে নিয়ে প্রথম বিতর্কে তৈরি হওয়া ধারণা পরিবর্তনের শেষ সুযোগ পাচ্ছেন ২২ অক্টোবর। সেদিন যদি বাইডেন যদি কোনো নাটকীয় ভুল করে বসেন – তাহলেই ট্রাম্পের পোয়াবারো।
দোদুল্যমান রাজ্যে জয় : বেশিরভাগ ‘সুইং স্টেটে’ বাইডেন এগিয়ে আছেন বলে জনমত জরিপগুলোতে দেখা গেলেও এমন কয়েকটি রাজ্য আছে, যেখানে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন, বা দু’জনের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম। এখানে সামান্য কিছু এদিক-ওদিক হলেই ইলেকটোরাল কলেজের ভোটগুলো ট্রাম্প ব্যাগে ভরে ফেলতে পারবেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে যেমনটা হয়েছিল, পপুলার ভোট ট্রাম্প কম পেয়েছিলেন, কিন্তু ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে তিনি হিলারিকে ভালোভাবেই টেক্কা দেন।
বাইডেনের ভুল : ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে তার নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। হয়তো এটা পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলেছে, কিংবা করোনাভাইরাস মহামারী তাকে এ সুবিধা করে দিয়েছে। বাইডেন এমন একজন প্রার্থী – যিনি কখনো কখনো বেফাঁস কথা বলে ফেলতে পারেন বলে মনে করা হয়। এরকম কিছু হলে ট্রাম্পশিবির তার সুযোগ নিতে দ্বিধা করবে না।