মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং নিয়ে নতুন জটিলতা

শুল্কের পর এখন ট্যাংকার নিয়োগ নীতিমালা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

আমদানি করেও বিপণন জটিলতা কাটছে না মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিংয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে শুল্ক নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় কাস্টমস ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে প্রায় এক মাস আগে আমদানি করা মেরিন ফুয়েল সরবরাহ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে বাঙ্কারিংয়ের ট্যাংকার নিয়োগ নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বাঙ্কারিংকে সিন্ডিকেট নির্ভর করার অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নতুন নীতিমালায় ট্যাংকার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৫০০ মেট্রিক টন বোঝাই সক্ষমতা এবং ২০ লক্ষ টাকা জামানত বাধ্যবাধকতার কারণে সিন্ডিকেট নির্ভর হয়ে পড়বে বাঙ্কারিং। এতে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের চোরাই হাই-সালফার মেরিন ফুয়েল বিপণনের আরো বেশি সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে বাঙ্কারিংয়ের জটিলতা নিরসনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত চেয়ে তিন বিপণন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। জানা যায়, বাংলাদেশে সমুদ্রগামী বিদেশি জাহাজে দীর্ঘদিন ধরে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং সুবিধা ছিল। তবে বিশ্বের উন্নত অনেক দেশের চেয়ে বাঙ্কারিংয়ে জ্বালানির দাম বেশি হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিদেশি জাহাজগুলোতে বাঙ্কারিং বন্ধ থাকে। শেষতক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কারণে লো-সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। কিন্তু বাংলাদেশে আসা বিদেশি জাহাজগুলোর বাঙ্কারিংয়ে অনীহার কারণে লো-সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং দীর্ঘসূত্রতায় পড়লেও নানান প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর ১৫ হাজার টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল নিয়ে থাই জাহাজ ‘এমটি টিএমএন প্রাইড’ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ১৬ সেপ্টেম্বর জাহাজটি খালাস শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত আমদানিকৃত এসব মেরিন ফুয়েল বিপণনই শুরু হয়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েলের শুল্কায়ন জটিলতা তৈরি হয়। কারণ বাঙ্কারিং নীতিমালার ৭(গ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট তেল বিপণন কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত সকল তেল শুল্কযুক্ত হিসেবে সরবরাহ করা হবে।’ অথচ বাঙ্কারিংয়ের জন্য আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েলের শুল্কমুক্ত থাকার কথা।
অন্যদিকে মেরিন ফুয়েল আমদানির পাশাপাশি জাহাজের এসব জ্বালানি সমুদ্রগামী জাহাজে সরবরাহের জন্য ১০টি ট্যাংকার নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া করে বিপিসি। তার অংশ হিসেবে বাঙ্কার সরবরাহকারী ৯টি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে বিপিসির বিপণনকারী তিন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।
এরপর এই ট্যাংকার নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ১৫ সেপ্টেম্বর বিপিসিকে আইনি নোটিশ দেয় মেসার্স চিটাগাং এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারী এম এ ওয়াদুদ। নতুন বাঙ্কারিং নীতিমালাটি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের রেগুলেশন অনুযায়ী হয়নি এবং বাঙ্কার সাপ্লাইয়ার নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পত্রিকায় কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ না করে কতিপয় প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়। নোটিশে বিপিসির চেয়ারম্যান, দুই পরিচালক, সচিব ও তিন বিপণন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করা হয়।
ওই নোটিশের পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করতে বিপিসির বিপণন ও বিতরণ বিভাগ মতামত চেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর প্যানেল আইনজীবীকে চিঠি দেন। গত ১ অক্টোবর বিপিসির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন আইনি মতামত দিয়ে পত্র দেন বিপিসির মহাব্যবস্থাপককে (বিপণন ও বিতরণ)। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘বিদেশি জাহাজে ন্যুনতম জ্বালানির (বাংকার) প্রয়োজনীয় বিষয়ে বিপণন সংস্থাগুলো থেকে মতামত প্রতিবেদন নেওয়া যায়। বিপণন সংস্থাগুলির কাছ থেকে প্র্রতিবেদন পাওয়ার পর নীতিমালার ৪নং ধারা সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা যেতে পারে এবং ট্যাঙ্কার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য দৈনিক পত্রিকায় উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ট্যাঙ্কার সংগ্রহের প্রক্রিয়া করা যেতে পারে। অন্যথা নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে নোটিশ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বিপিসির প্যানেল আইনজীবী মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বিপিসি থেকে বাংকার নীতিমালা বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এটি গোপনীয় বিষয়। তবে আইনগত বিষয়টি পর্যালোচনা করেই মতামত দিয়েছি।’
এদিকে নতুন বাঙ্কারিং নীতিমালা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে ৬ অক্টোবর বিপিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় গত ৬ অক্টোবর যমুনা অয়েলের তালিকাভুক্ত বাঙ্কার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ আমানত মেরিন সার্ভিস। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশি বিদেশি বাঙ্কার সরবরাহের জন্য ১০০ থেকে ৩০০ মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েলের চাহিদা থাকে। কিন্তু নতুন নীতিমালায় ন্যুনতম ৫০০ টন সক্ষমতার ট্যাংকার সংগ্রহের পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা পে-অর্ডার জামানত নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এতে ৫০০টন সক্ষমতার কয়েকজন জাহাজের মালিক সিন্ডিকেট করে তেলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগে পাবেন। তাছাড়া বিদ্যমান নীতিমালায় স্ক্র্যাপ শিপের মাধ্যমে আসা আমদানিকৃত তেল বাঙ্কার হিসেবে বিক্রয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ ৫০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজের কয়েকজন মালিক সস্তায় স্ক্র্যাপ শিপের ফুয়েল ক্রয় করে থাকে। এসব তেল বাঙ্কারিংয়ের সুযোগ দেওয়া হলে বিপিসির আমদানিকৃত তেল অবিক্রিত থেকে যাবে। এতে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
ওই চিঠিতে বাঙ্কারিংয়ের জন্য জাহাজের ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩০০ মেট্রিক টন এবং জামানত হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি রাখার পাশাপাশি স্ক্র্যাপ শিপের মাধ্যমে আসা তেল বিপিসির আওতাধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সংগ্রহ ও বিপণনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে প্যানেল আইনজীবীর আইনি মতামত এবং ৬ অক্টোবরের শাহ আমানত মেরিন সার্ভিসের পত্র পাওয়ার পর গত ১২ অক্টোবর তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মতামত চেয়ে প্রতিষ্ঠান তিনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয় বিপিসি।
বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বন্টন ও বিপণন) মোরশেদ হোসাইন আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘নীতিমালার জটিলতার বিষয়ে আমরা বিপিসির প্যানেল আইনজীবীর আইনি মতামত চেয়েছি। আইনজীবীর মতামত পেয়েছি। তাছাড়া বাঙ্কার সরবরাহকারী আগের একটি প্রতিষ্ঠানের একটি চিঠি পাওয়া গেছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ১২ অক্টোবর বিপণন কোম্পানিগুলোর মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। বিপণন কোম্পানিগুলোর মতামত পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কে ফের ব্যাটারি রিকশা
পরবর্তী নিবন্ধপর্নের কাছাকাছি কনটেন্ট আপলোড করলে কঠোর ব্যবস্থা : তথ্যমন্ত্রী