ব্যবসায়ী মো. আইনুদ্দীন প্রকাশ মালু নামের এক ব্যবসায়ীর ফিস ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছ কিনেছিলেন খুচরা মাছ ব্যবসায়ী বাবলা। কিন্তু মাছ বিক্রির টাকা মহাজনকে না দিয়ে আইপিএলের জুয়ায় খুঁইয়ে বসেছেন। একদিকে মহাজনের তাগাদা অন্যদিকে ঘরে স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। রাতভর শহরের এখান-ওখান ঘুরে, উপায়ন্তর না দেখে আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। হঠাৎ তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপে। তিনি ভাবেন, ছিনতাই নাটক সাজালে কেমন হয় ? এছাড়া সম্প্রতি পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছে। সেই ভাবনা থেকে তিনি ছিনতাইয়ের অভিযোগ করলেন পুলিশের বিরুদ্ধেই। জানালেন, শুক্রবার রাতে লালখান বাজারের বাসা থেকে সিএনজি টেক্সিযোগে মাছ কিনতে যাওয়ার সময় নগরীর ডিসি হিলের সামনে একদল পুলিশ তার গতিরোধ করে। তাকে টেক্সি থেকে নামিয়ে নীল রঙের একটি গাড়িতে তুলে নেয় পাঁচ পুলিশ সদস্য। তার কাছে থাকা ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় তারা। তার হাতে কিছু ইয়াবা ও অন্যহাতে টাকা দিয়ে ছবি তোলে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের কারো জামায় নেমপ্লেট ছিল না। পরে দুই ঘণ্টা বিভিন্ন সড়কে ঘুরিয়ে তাকে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে নামিয়ে দেয়। কোতোয়ালী থানার ওসি
মো. মহসীন এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, বাবলা ফিরিঙ্গি বাজারের আড়ৎ থেকে মাছ কিনে লালখান বাজারে বিক্রি করেন। শনিবার সকালে মাছের আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি আমিনুল হক বাবুলকে তিনি বিষয়টি জানান। বাবুল তাকে নিয়ে সিএমপি কমিশনারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেন।
সিএমপি কমিশনারের নির্দেশে পরে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা অভিযোগটি তদন্ত করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। থানার টহল টিম, ফোর্সসহ পুলিশের সকল সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডিসি হিল ও মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু এমন ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নি। এবার কোতোয়ালী থানা পুলিশ বাবলাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
ওসি কোতোয়ালী মহসীন বলেন, রাত ৮টা থেকে বাবলাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। বার বার সে অভিযোগের প্রতি অনড় থাকে। একপর্যায়ে তাকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও দেখানো হয়। বাবলা প্রথমে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করলেও এক পর্যায়ে সে বলে ছিনতাই হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। সবশেষে সে বলে দুই হাজার ৭০০ টাকা পুলিশ তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। বাবলার বিভ্রান্তিকর কথায় আমাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে সে স্বীকার করে যে, ধার-দেনা থেকে বাঁচতে সে নাটক সাজিয়েছিল। সে স্বীকার করে ব্যবসায় লোকসানের কারণে তার পাওনাদার বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আইপিএল এর জুয়া খেলে সে অনেক টাকা হারিয়েছে। সমপ্রতি বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেছেন তিনি। এতে তার নিয়মিত খরচও বেড়ে গেছে। সেজন্য এ ধরনের নাটক সাজিয়েছে।
ছিনতাইয়ের নাটক সাজানোর কথা স্বীকারের পর বাবলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আড়তদার আইনুদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত বাবলা দাশ নগরীর লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় লেনের বাসিন্দা ধনঞ্জয় দাশের ছেলে।