মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে ৫ কিলোমিটারের বেশি সড়ক নির্মাণ এবং বেশ কিছু ভূমি হুকুমদখল করতে হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও। নগরীর বিভিন্ন সড়ক গত কবছর ধরে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি সড়ক সম্প্রসারিত না হওয়ায় শহরে যান চলাচলের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং যান চলাচলে গতি আনতে নগরীর চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রাসরণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ। ইতোমধ্যে রাস্তাগুলোর উপর সার্ভে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কি পরিমাণ জায়গা হুকুম দখল করতে হবে, কোন রাস্তাটির দৈর্ঘ্য কত ইত্যাদি বিষয়ে হিসেব নিকেশ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিডিএর একজন প্রকৌশলী গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, লালখান বাজার মোড় থেকে কাজীর দেউড়ি-চট্টগ্রাম কলেজ-চকবাজার হয়ে মুরাদপুর কিংবা বহদ্দারহাট যাওয়ার রাস্তাটি বেশ ব্যস্ত একটি সড়ক। প্রতিদিন এই রাস্তায় হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। সিডিএ ইতোপূর্বে মুরাদপুর থেকে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে দিয়ে গণি বেকারি পর্যন্ত রাস্তাটি সম্প্রসারণও করেছে। অপরদিকে চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত রাস্তাটিও সম্প্রসারণ করা হয়। সড়কটির যান চলাচলে বড় সংকট হচ্ছে কাজীর দেউড়ি থেকে গণি বেকারি পর্যন্ত অংশ। রাস্তাটির উক্ত দুই কিলোমিটারেরও বেশি অংশের কোথাও ২০ ফুট এবং কোথাও ৩০ ফুট প্রশস্ত। এতে করে রাস্তাটির বড় অংশ সম্প্রসারিত হলেও এই দুই কিলোমিটার যান চলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পুরো রাস্তাটিতে যান চলাচলে গতিশীলতা তৈরি করতে সিডিএ কাজীর দেউড়ি থেকে গণি বেকারি পর্যন্ত অংশের পুরোটাই ৬০ ফুটে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অপরদিকে কাজীর দেউড়ি থেকে চট্টেশ্বরী মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি ৬০ ফুট প্রশস্ত। জিইসি থেকে গোল পাহাড় মোড় পর্যন্ত কিংবা প্রবর্তক মোড় বা চকবাজার থেকে গোলপাহাড় পর্যন্ত রাস্তা ৬০ ফুট। মাঝখানে চট্টেশ্বরী মোড় থেকে গোলপাহাড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারের মতো রাস্তার কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ৩০ ফুট প্রশস্ত। রাস্তাটির এই অংশটিকে ৬০ ফুটে উন্নীত করা গেলে পুরো এলাকার যান চলাচলে বিশাল একটি পরিবর্তন আসবে। দিনভর যানজটে স্থবির হয়ে থাকা রাস্তাটির গতিশীলতার উপর পুরো এলাকার যান চলাচলের সার্বিক চিত্র নির্ভর করছে বলেও সিডিএর পদস্থ একজন প্রকৌশলী উল্লেখ করেন।
কাজীর দেউড়ি কিংবা নিউ মার্কেট মোড় থেকে লাভ লেইন পর্যন্ত রাস্তাটি ৬০ ফুট প্রশস্ত, অপরদিকে নন্দনকানন থেকেও চারদিকে যাওয়া রাস্তাও বেশ প্রশস্ত। কিন্তু লাভ লেইন থেকে নন্দনকানন পর্যন্ত রাস্তাটির কোথাও ৩০ ফুট বা কোথাও ৩৫ ফুট। এতে করে রাস্তাটি যান চলাচলের ক্ষেত্রে বেশ সংকট তৈরি করে। এই সংকট কাটাতে লাভ লেইন থেকে নন্দনকানন পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার রাস্তা ৬০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে।
আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের পাশ দিয়ে মাদারবাড়ি-বারিক বিল্ডিং রোডের একটি ক্রস রোড রয়েছে। এক কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি অত্যন্ত ব্যস্ত একটি সড়ক। সরু রাস্তাটি কোথাও ২০ ফুট, কোথাও বা আরো কম প্রশস্ত। এই রাস্তাটিকে সিডিএ ৩০ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটির ব্যাপারে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের সার্ভে শুরু হয়েছে। এতে কি পরিমাণ ভূমি হুকুম দখল করতে হতে পারে তা নিয়ে কাজ চলছে। প্রকল্প ব্যয় নিয়েও চলছে হিসেব নিকেশ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস চারটি রাস্তা সম্প্রসারণ প্রকল্পের কথা স্বীকার করে বলেন, চারটি রাস্তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এগুলো সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। এগুলো পুরো শহরের যান চলাচলের উপর প্রভাব ফেলে মন্তব্য করে সিডিএ চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমরা হিসেব নিকেশ করছি। প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ টাকা খরচ হবে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে রাস্তা সম্প্রসারণে।