আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে আবারও খুনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ৪ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিহতদের মধ্যে একজন সন্ত্রাসী বাহিনী মুন্না গ্রুপের প্রধান মাস্টার রফিক প্রকাশ মুন্নার ছোট ভাই।
জানা গেছে, কুতুপালং ১/ইস্ট ক্যাম্পের মৌলভী হামিদ ও আনাস গ্রুপের সাথে ক্যাম্প ২/ওয়েস্টের মুন্না গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এই ৪ জন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে এক আনসার সদস্যসহ কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই মাস্টার মুন্না গ্রুপের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে এখনো তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা। তিনি বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুতুপালং ক্যাম্পে নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ ও ৫ অক্টোবর ৩ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুতুপালং ক্যাম্প ১/ইস্টে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা কাজ করছে।
ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্প ২/ওয়েস্টের রাস্তা থেকে মাস্টার মুন্নার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ মাহমুদ উল্লাহকে (৩২) ধরে নিয়ে যায় মৌলভী হামিদ ও আনাস গ্রুপের সদস্যরা। তারা পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে মাহমুদকে হত্যা করে।
এদিকে, গতকাল দুপুরে এ প্রতিবেদকের নিকট প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন মুন্নার ভাই গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ মাহমুদ উল্লাহ। এর কয়েক ঘণ্টা পর তিনি খুন হন।
কঙবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম ও উখিয়া থানার ওসি আহম্মেদ সঞ্জুর মোরশেদ জানান, এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের গলা কাটা ও অপর ৩ জন গুলিবিদ্ধ। এ ঘটনায় একজন আনসার সদস্য আহত রয়েছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ঘটনার পরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরও পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে একাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। এদের মধ্যে ক্যাম্প জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করে কর্তৃত্ব করছে একটি উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন। তাদের আধিপত্য খর্ব করতে ক্যাম্প ও ব্লকভিত্তিক বেশ কিছু ছোট ছোট সন্ত্রাসী গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এদের কাজ মূলত ক্যাম্পে যারা ইয়াবা ব্যবসা, স্বর্ণ পাচার ও মানব পাচার করে অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছে, তাদের টার্গেট করে সুবিধা আদায় করা। এ ধরনের দুটি গ্রুপের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে হামলা-পাল্টা হামলা, অপহরণ, গোলাগুলি ও খুনের ঘটনা।