নগরীর আকবরশাহ এলাকায় কোভিড পরীক্ষার নামে রহস্যজনকভাবে এক আইনজীবীর বাসায় যাওয়া চারজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডির ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় আকবর শাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলীর নূর মোহাম্মদ ভবনের একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী আইনজীবী আব্দুর রহমান রাহিল চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত রয়েছেন। জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ওসি মো. জহির উদ্দিন আজাদীকে বলেন, প্রতারণার উদ্দেশে অভিযুক্তরা সেই বাসায় গিয়েছিল। এই ঘটনায় একটি প্রতারণার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- আবিদ হাসান (২৪), আল আমিন (১৮), শহিদুল আলম তামিম (১৬) ও আব্দুল আল মাহমুদ(১৬)। অভিযুক্তরা সবাই শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমিনুল হক আজাদীকে বলেন, আসামিদের কাছ থেকে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশনাস ডিজিজেজ) কার্ড পাওয়া গেছে। পরে বিআইটিআইডিতে খবর নিয়ে দেখেছি, এই ধরনের কোনো আইডি কার্ড তাদের নামে ইস্যু করা হয়নি। মূলত কার্ডটি তারা জালিয়াতি করে বানিয়েছিল। পরিদর্শক আমিনুল হক বলেন, করোনো টেস্টের নামে সেখানে যাওয়া আসামিদের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল সেই ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে তারা যে অসৎ উদ্দেশে গিয়েছিল তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এটা পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, কোনো এক বড় ভাইয়ের নির্দেশে তারা পিপিই পরে করোনো টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করতে যায়। পুলিশ এখন নির্দেশদাতা সেই বড় ভাইয়ের খোঁজ করছে। অ্যাডভোকেট রাহিল আজাদীকে বলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১১টায় মাস্ক ও পিপি পরিহিত তিন যুবক এসে দরজায় কড়া নাড়ে। আমি ভেতর থেকে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা করোনো টেস্ট করার জন্য এখানে এসেছে বলে জানায়। তারা বলেছিল, ফৌজদারহাটের বিআইটিআই থেকে তাদের পাঠানো হয়েছে। রাহিল বলেন, আমার জানা মতে, সরকারের পক্ষ থেকে বাসায় গিয়ে করোনো টেস্ট করার মতো কোনো আদেশ জারি করা হয়নি। এতে বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। ওই সময় একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এতে আমি কিছুটা সাহস পেয়ে দরজা খুলি। পরে আমরা দু’জন মিলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। এক পর্যায়ে তারা একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে এসেছে বলে জানায়। এক বড় ভাই তাদের পাঠিয়েছে। পরে ফোন করে বড় ভাইকে ডাকলে সেও ঘটনাস্থলে আসে। তাকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সুমন নামে একজনের কথা কথা জানায়। পরে সুমনের নম্বরে ফোন করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একই সময় আমরা ফৌজদারহাটে খবর নিয়ে জানতে পারি এই ধরনের কোনো কার্যক্রম তাদের চালু নেই। সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
আইনজীবী জানান, এই সময় ভবনটিতে বসবাস করা সব পুরুষই বাসায় থাকেন না। সকালে তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে চলে যান। ভাগ্যক্রমে ওই দিন তিনিসহ ফ্ল্যাটের আরও কয়েকজন পুরুষ সদস্য বাসায় ছিলেন বলে জানান। অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান রাহিল বলেন, বর্তমান একটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এই ঘটনার মাধ্যমে অনেক কিছু হয়ে যেতে পারত।