করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে টিকা তৈরির দৌড়ে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য শিগগিরই তারা বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআসি) আবেদন করবে। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের দাবি, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তাদের ওই সম্ভাব্য টিকা ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন সায়েন্স আর্কাইভ বায়োআর্কাইভে দিয়েছে গ্লোব বায়োটেক। কিন্তু এখনও ওই গবেষণাপত্রের পিয়ার রিভিউ হয়নি। অর্থাৎ, স্বাধীন কোনো গবেষক তাদের ওই গবেষণাপত্র পরীক্ষা করে তাদের দাবির সঠিকতা যাচাই করেননি। তবে বায়োআর্কাইভে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ায় গ্লোব বায়োটেক এখন মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বিএমআসির ‘নৈতিক ছাড়পত্র’ চাইতে পারবে। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাকন নাগ বলেন, বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের যে ধরনটি সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে, সেই ডি-৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ‘কাজ করবে’ তাদের টিকা ‘ব্যানকোভিড’। ইতোমধ্যে আমরা নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকা ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করেছি। তাতে ব্যানকোভিড সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। টিকা প্রয়োগের আগে এবং টিকা প্রয়োগের পরে ইঁদুরের শরীরে কোনো বিরূপ পরিবর্তন বা কোনো বিষক্রিয়া হয়নি। কাকন নাগ বলেন, গ্লোব বায়োটেক কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা সিআরওর সঙ্গে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য প্রটোকল তৈরির কাজ করছে। তারা শিগগিরই প্রটোকলসহ বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য নৈতিক ছাড়পত্রের আবেদন করবেন। বিএমআসির ইথিক্যাল অ্যাপ্রুভাল পেলে আমরা দ্রুততম সময়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য আবেদন করতে পারব।
গত ৩ জুলাই তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের কাছে তখনও গ্লোব বায়োটেকের এই গবেষণা নিয়ে কোনো তথ্য ছিল না। যে কোনো রোগের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে নানা ধাপের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মানবদেহে তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়, তাতে সফল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই তা টিকা হিসেবে গণ্য হয়। নতুন করোনাভাইরাসের কার্যকর টিকা তৈরির চেষ্টায় বিশ্বে এখন প্রায় দুইশ গবেষণা চলছে। এর মধ্যে আধা ডজন সম্ভাব্য টিকা পৌঁছেছে পরীক্ষার একেবারে শেষ পর্যায়ে। গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ, ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনসহ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।