পেঁয়াজের বাজারে আবারও শুরু হয়েছে সিন্ডিকেট কারসাজি। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে দেশের আমদানিকারকরা মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ড, মিশর, তুরস্ক এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ইতোমধ্যে মিয়ানমার এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে। সংকট বিবেচনায় বন্দর কর্তৃপক্ষও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেঁয়াজের চালান খালাসে উদ্যোগী হয়। খালাস হওয়া সেইসব পেঁয়াজ বাজারে প্রবেশ করলেও এখনো দামের কোনো হেরফের হচ্ছে না। এখনো পাইকারি বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। অথচ বর্তমানে বাজারে মিয়ানমার ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজেরও সরবরাহ বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের চাষিদের পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বাজারে প্রবেশ করেছে। সেই দেশি পেঁয়াজের বাজারও গরম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ঠিক একইভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। এছাড়া পেঁয়াজের আমদানিমূল্যের সাথে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য প্রায় দ্বিগুণ ছিল। প্রশাসনেরও অভিযানও দমাতে পারেনি চক্রটিকে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাঁচশতাধিক টন পেঁয়াজ এসেছে। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আড়তদার বলছেন, পেঁয়াজ কত টাকায় বিক্রি করতে হবে সেটি আমদানিকারকরা নির্ধারণ করে দেন। মোবাইল ফোনে বলে দেন কি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। এখানে আমরা কেবল কিছু কমিশন পেয়ে থাকি। পেঁয়াজের বাজার বাড়লেও আমাদের কমিশনের পরিমাণের কোনো পরিবর্তন হয় না। উল্টো বাজার বাড়লে আমাদের বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
গতকাল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। যদিও দাম চড়া। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬৫ টাকা এবং পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত ৪-৫ দিন যাবত বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। আসলে এখানে সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগটি সত্য নয়। বন্দর থেকে আশানুরূপ পেঁয়াজের চালান খালাস হয়নি। শুনেছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে খালাসের পরিমাণ বাড়বে। তখন বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাবে। আর সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের (প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন) উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ৩৫০টি আইপির (আমদানি অনুমতিপত্র) বিপরীতে দেশের ৭০-৭৫ জন ব্যবসায়ী বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে মোট এক লাখ ৬১ হাজার ২৫৭ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেন। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছ থেকে ৭৮৬ টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারমধ্যে কেবল আজ (গতকাল) ছাড়পত্র নিয়েছে ৪৪৬ টন পেঁয়াজের।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে গত বছরও কারসাজিতে মেতেছিল অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ বছরও তারা এই পথেই হাঁটছে। দেখা যায়, প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে তারা আন্দোলন করে দোকান পাট বন্ধ করে দেয়। পেঁয়াজের কারসাজি বন্ধে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করি।