সৌদি আরবে ফেরার টিকেট সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত প্রবাসী। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চাকরিতে ফিরে যেতে মরিয়া তারা। তীব্র গরমের মাঝে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হুড়োহুড়ি করেও টিকেট না পেয়ে ফেরত গেছেন কয়েকশ প্রবাসী। তাদেরকে আজ সোমবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম বিমান অফিসে আসতে বলা হয়েছে।
টিকেটের এই আকালের মাঝে ওমরা খুলে দেওয়ার সুযোগ গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিমান অফিসের সিকিউরিটি গার্ডদের মাধ্যমে একটি চক্র কৌশলে টিকেট নিয়ে কারসাজি করছেন বলেও অভিযোগ। তবে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জানা যায়, করোনাকালে বন্ধ হয়ে যাওয়া সৌদি আরবের রিয়াদ, মদিনা দাম্মানসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট চালু করেছে। এতে করে গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে দেশে আটকা পড়া প্রবাসীদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সীমিত ফ্লাইটে এত বিপুল সংখ্যক প্রবাসীকে ফেরত পাঠানো কঠিন। করোনাকালে আটকে পড়া প্রায় আশি হাজার সৌদি প্রবাসী যেকোনোভাবে ফিরতে মরিয়া। এতে করে ফ্লাইটের টিকেটে জটলা তৈরি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক যাত্রীর একটি বড় অংশ বাংলাদেশ বিমানের ফিরতি টিকেট করে দেশে এসেছিলেন। এখন ওই টিকেটে তারা সৌদি আরব ফিরতে চান। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একসাথে এত যাত্রী পরিবহন করতে পারছে না। এতে করে সংকট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, আমরা ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি। বিমান সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নতুন কোনো টিকেট বিক্রি করবে না। আগের যাত্রীদের আগে পাঠাবে। মার্চের ১৬ তারিখ থেকে ক্রমান্বয়ে যাত্রীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে কোনো ফ্লাইট চালু না হলেও ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে গন্তব্যে যাবেন এমন শত শত যাত্রী চট্টগ্রাম বিমান অফিস থেকে টিকেট ঠিক করে নিচ্ছেন। মার্চ থেকে আটকা পড়া যাত্রীদের টিকেট চট্টগ্রাম বিমান অফিস থেকে ঠিক করে নতুন ডেট দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল সপ্তাহের প্রথম দিন শত শত যাত্রী নগরীর দুই নম্বর গেট বিমান অফিসের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন। টিকেটের জন্য সকাল ছয়টা থেকে তারা রাস্তায় দাঁড়ান। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। তাদেরকে বিমান অফিসের ভেতরে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না। কারো সাথে কথা বলার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছিল।
গেটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডসহ সংঘবদ্ধ একটি চক্র টিকেট নিয়ে কারসাজি করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক যাত্রী বলেন, প্রকাশ্যে দুর্নীতি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই।
তবে বিমান অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হচ্ছে না। মানুষ আতংকিত হয়ে নিজেদের মতো করে ঘটনার ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আগের ফ্লাইটের যাত্রীদের আগে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে করে কারো কারো ভিসার মেয়াদ বা চাকরির সমস্যা হলেও আমাদের কিছু করার থাকছে না। নতুন করে কোনো টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, তবুও অনেকেই ভিড় করছেন। ওমরা চালু করার খবরে নতুন করে শংকিত হয়েছেন অনেক প্রবাসী। তাদের ধারণা তারা টিকেট পাবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা সিরিয়ালি টিকেট দিচ্ছি। দেওয়ার চেষ্টা করছি।
একাধিক প্রবাসী গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সাথে মানুষের মতো আচরণ করা হচ্ছে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি সকাল থেকে। তীব্র গরমে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে। আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। করোনাকালে এমন ভিড়, আমাদেরকে ভেতরে ছায়ায় বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
অবশ্য দুপুর বারোটার দিকে গেট খুলে দেওয়া হয়। ওই সময় টিকেট প্রত্যাশীরা ভেতরে বসার সুযোগ পান। ঝামেলা এড়াতে বিমান অফিস থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। দুপুরের পর প্রবাসীদের অনেককে আজ সকাল সাতটায় আসতে বলা হয়েছে।
ফেনীর মোহাম্মদ আরক আলী গতকাল আজাদীকে বলেন, টিকেট নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। বাড়তি টাকা নিয়ে টিকেট দেওয়া হচ্ছে। ভোর থেকে অপেক্ষা করেও আমাদের টিকেট দেওয়া হয়নি। কাল সকালে আসতে বলেছে।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার কার্যালয়ের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। অনেক মানুষ একসাথে আসায় সংকট হচ্ছে। টিকেটের সংকট রয়েছে। অনেকদিন ফ্লাইট চলেনি। বহু মানুষ আটকা পড়েছে। আমাদেরকে উপরের নির্দেশনা অনুসরণ করে যাত্রীদের টিকেট রি-ইস্যু করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, অক্টোবরের এক তারিখ থেকে বিমান বাংলাদেশ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট অপারেট শুরু করেছে। যেসব যাত্রীর কাছে সৌদি আরব যাওয়ার ফিরতি টিকেট রয়েছে কেবল তাদেরই আসন বরাদ্দ করার কথা। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এতে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।