কর্ণফুলী ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ কমানোর কোনো সুযোগ আছে কিনা তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বুয়েটকে। প্রকল্পের কাজের পরিধি, সময় ও ব্যয় বাড়ার প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক থেকে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিটিআরসি’কে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টির উপর বিস্তারিত রিপোর্ট দাখিলের পর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। অপরদিকে কর্ণফুলী রক্ষার দায়িত্বের নেতৃত্ব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সকলের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে বলেও পৃথক এক বৈঠকে মন্তব্য করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, নৌ পরিবহন সচিব মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী গতকাল কর্ণফুলী নদী সরজমিনে পরিদর্শনের পর পৃথক দুইটি বৈঠকে অংশ নেন। সকালে তিনি কর্ণফুলী নদী পরিদর্শন করেন। এই সময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদসহ বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তা, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নদীর দুইদিকে পরিদর্শন শেষে তিনি বন্দর ভবনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের লাইফ লাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদীকে দূষণ ও অপদখল থেকে রক্ষার নেতৃত্ব বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে মন্তব্য করে নৌ পরিবহন সচিব মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী কর্ণফুলী নদীর সাথে জড়িত অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কর্ণফুলী নদীর ভূমিকা অতুলনীয়। তাই ভবিষ্যতে এ নদীকে একদিকে দূষণ ও অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে অপরদিকে নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো বড় আকারের জাহাজ গমনাগমনের সুবিধা তৈরি করতে হবে। শহরের নাগরিক বর্জ্য এবং স্যুয়ারেজের মাধ্যমে যাতে নদী দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি না পায় এ জন্য নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সভায় মত প্রকাশ করা হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলী নদীর নান্দনিক রূপ ফিরিয়ে এনে অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধ, নাব্যতা বৃদ্ধি ও অবৈধ দখল রোধ কল্পে নদী সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চবক অধিশাখার কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএর প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।
অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ সংস্থার কর্ণফুলী নদী সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি এবং বাস্তবায়নের সুফল সম্পর্কে সভায় অবহিত করেন।
কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা মূল চ্যানেলে বাড়লেও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং দূষণ ও অবৈধ দখল বেড়ে যাওয়ায় নৌ সচিব উদ্বেগ জানান।
তিনি প্রতিটি সংস্থাকে তাদের প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নদীর দূষণ রোধ এবং অবৈধ দখল প্রতিরোধের জন্য সমন্বিতভাবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর দূষণ রোধ, নাব্যতা বৃদ্ধি ও অবৈধ দখল রোধকল্পে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান যথাসময়ে বাস্তবায়নের জন্য সংস্থাগুলোকে আরো উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এবং কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার আরিফুর রহমান কর্ণফুলী নদীর চ্যানেল এবং বাকলিয়ার চর থেকে বন্দর অভিমুখ পর্যন্ত নগরী নকশার প্রকল্পের অগ্রগতি এবং ঘাটতি বিষয়ক একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন সভায়।
পরে পৃথক একটি সভায় কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন নৌপরিবহন সচিব মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী। বৈঠকে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় নদী থেকে বালি ও মাটি উত্তোলনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে খরচ ও সময় বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রকল্প ব্যয় ২৫৮ কোটি টাকা থেকে একশ’ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নৌপরিবহন সচিব বলেন, টাকার অংকটা কোনোভাবে কমানো যায় কিনা তা খুঁজে দেখা দরকার। তিনি বলেন, নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি ও বালি উত্তোলনের পর তা প্রথমে বার্জে পরে ট্রাকে পরিবহন করার কথা রয়েছে। মাটি ও বালি পরিবহনে বিভিন্ন খাত রয়েছে। এখানে একটি খাতের সাথে অপর খাতের সমন্বয় করে খরচ কমানোর যায় কিনা তা খুঁজে বের করতে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বুয়েটের বিটিআরসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যাপারে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠকে প্রকল্পটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও আখ্যায়িত করা হয়।