হাটহাজারীতে পুকুর জলাশয়ে নগ্ন থাবা থামছে না। চলছে যত্রতত্র পুরোনো পুকুর ভরাট। পুকুর ভরাটে রাজনৈতিক প্রভাবশালী, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ভূমিদস্যু যেমন জড়িত, তেমনি রয়েছেন সচেতন মানুষও। পুকুর ভরাটকারীদের তালিকায় রয়েছে চিকিৎসক, শিল্পী থেকে শুরু করে নামীদামী মানুষের নাম। পুকুর জলাশয় ভরাটের ফলে যেমন পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে, তেমনি অগ্নি দুর্যোগকালীন পানি সংকটের শংকাও তৈরি হচ্ছে।
জানা যায়, হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে রামকৃঞ্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে গার্মেন্টস বানানো হচ্ছে। গত বছর ঘটনাটি ঘটলেও অপরাধীরা পার পেয়ে যান। তেমনি অতি সম্প্রতি পুকুরে মধ্যখানে খণ্ড খণ্ড ঘেরা দিয়ে ভরাট চলছে পার্শ্ববর্তী আরেকটি পুকুরে। সরেজমিনে দেখা যায়, ফতেয়াবাদ চৌধুরী হাট এলাকায় আগের ভরাট হওয়া শতবর্ষী পুকুরের কিয়ৎদূরে ভরাট হচ্ছে আরেকটি পুরোনো পুকুর। স্থানীয় অবসরাপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসক বর্তমানে পুকুরে ঘেরা দিয়ে দখল ভরাট করলেও আগেও ভরাটের অভিযোগ রয়েছে ভাস্কর চারু শিল্পীর বিরুদ্ধেও।
শনিবার রাতে কথা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. সুকুমার নন্দীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি কোন পুকুর ভরাট করছি না। ঘেরা দিয়েছি। পুকুর ভরাটে শুধু আমার নাম কেন আসছে, শিল্পী অলক রায়ওতো ভরাট করেছে। উনিতো আমার চেয়েও প্রতিথযশা। তাছাড়া রুবেল বণিক, অঞ্জনরাওতো পুকুরে ঘেরা দিয়েছে।’ তিনি বলেন, আমি অবসরের পর আমার জায়গায় ফ্রি-ফ্রাইডে ক্লিনিক শুরু করেছি। স্থানীয় কিছু মানুষ সেটাও পছন্দ করেন না। আমার ক্লিনিকের সাইনবোর্ড পর্যন্ত নিয়ে যায়।
পরে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও অধ্যাপক অলক রায় শনিবার রাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমি আধা গন্ডা পুকুরের পার কিনেছিলাম ২০০০ সালে। ওখানে আমি বাড়ি করেছি। পাশে একজন ইঞ্জিনিয়ার বাড়ি করেছেন। আমি শুধু ওই বাড়ির সীমানা ঠিক রেখে পুকুরের পাড় ভরাট করেছি। তাও ২০০৩ সালের দিকে। পুকুরের আয়তনে কোন পরিবর্তন আসেনি। আমি আরো এক গণ্ডা পুকুরের অংশ করেছি। ওই জায়গা নেওয়ার পর আমি একটি ঘাট দিতে চেয়েছি। কিন্তু সুকুমার নন্দীরা সবাই মিলে আমাকে করতে দেয়নি। আমি বলেছি পুকুর ভরাট করবো না। যতদিন পানি থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমি পুকুরে কোন ঘেরাও দিবো না। অথচ তারা সবাই খন্ড খন্ড করে পুকুরটিতে ঘেরা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পুকুর ভরাট করে পরিবেশ বিপন্নকারীদের ব্যাপারে কিঞ্চিৎ ছাড়ও দেওয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, আমরা নোটিশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।