অর্থ সংকটে পেশা ছাড়ছেন পুরনোরা নতুনরা জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে

পুলিশের সোর্স

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

অপরাধ দমনে ও অপরাধী ধরতে সোর্সদের ভূমিকা অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সোর্সমানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংকটে পেশাদার সোর্সরা একে একে পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। আর উঠতি সোর্সরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে। সোর্সের সহযোগিতায় আসামি হয়তো ধরতে পারছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা, কিন্তু সোর্সদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় হিতে বিপরীত হচ্ছে। সোর্সের দেয়া মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করে অভিযান চালাতে গিয়ে নিরপরাধ অনেকের জেল জরিমানা, সম্মানহানি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। সোর্সমানি না পৌঁছায় চট্টগ্রামে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে পেশাদার সোর্স গড়ে উঠছে না। ফলে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা করেও সোর্সের অভাবে তাদের ধরতে পারছে না পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দাবন্দর) এস এম মোস্তাইন হোসেন আজাদীকে বলেন, যে লোকটা সোর্স হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বেড়াবে, সে কখনোই সোর্স হতে পারে না। সে যে সোর্স সেটা আমি ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারবে না। সে আমাকে গোপনীয় তথ্য দেবে, তার পরিচয়ও গোপন রাখা হবে। তার প্রকাশ্যে আসার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে পেশাদার সোর্সের প্রয়োজন কমছে। কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠকের কারণে সাধারণ মানুষ থেকে আমরা এখন অনেক তথ্য পাচ্ছি। সাধারণ মানুষ আইন শৃক্সখলা বাহিনীর কাজে যতো এগিয়ে আসবে সোর্স নামধারীদের দৌরাত্ম্য ততোই কমবে।

এ বিষয়ে উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক আজাদীকে বলেন, অপরাধী ধরতে সোর্সের প্রয়োজন রয়েছে। সোর্সের ব্যাপারটা সংশ্লিষ্ট অফিসারের উপর নির্ভর করে। এখন সোর্স যদি অফিসারকেই বিক্রি করে, তবে সে কীভাবে সোর্স হবে? আমরা এখন বিভিন্ন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করি, তথ্য যাচাই করি। কমিউনিটি পুলিশিং, বীট পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে সাধারণ মানুষকে পুলিশের কাছে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই সোর্সের যে দৌরাত্ম্যের কথা বলছেন তা ধীরে ধীরে কমে আসবে। তাছাড়া অপরাধ করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই এখন, সে যতোই সোর্স পরিচয় দিক না কেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোর্স ছাড়া অচল আইনশৃক্সখলা বাহিনী। সোর্সের ওপর নির্ভর করে অভিযান চালাতে হয়। তাই নগরী ও জেলায় সহস্রাধিক সোর্স রয়েছে। সোর্সরা আড়ালে থাকার কথা থাকলেও নিজেদের সোর্স পরিচয় দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।

জানা গেছে, তিন মাস পর পর সোর্স মানি বরাদ্দ হয়। নগরী ও জেলার থানাগুলো, গোয়েন্দা পুলিশ ও সিআইডিতে সোর্স মানি বিতরণ করা হয়। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সোর্স মানি থানার ওসি পর্যন্ত পৌঁছে না। পৌঁছলেও আমরা পাই না। মাঝে মধ্যে ৫১০ হাজার টাকা সোর্স মানি আসে। অভিযোগ করার কোনো উপায় নেই। পুলিশের বার্ষিক বাজেট থেকে এ টাকা দেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরী ও জেলার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চাকরিজীবন ৮ থেকে ১০ বছর হলেও কখনও সিনিয়র অফিসারদের কাছ থেকে সোর্স মানি পাইনি। তবে মাঠ পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত মাঠ পর্যায়ে বেশি কাজ করেন সাবইন্সপেক্টররা। একজন ইন্সপেক্টর বা সাবইন্সপেক্টরের রয়েছে ৩৪ জন সোর্স। একজন সাবইন্সপেক্টর মাসে ন্যূনতম এক হাজার টাকা সোর্স মানি পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাচ্ছেন না তারা। ফলে উদ্ধার করা মাদকদ্রব্য বা পণ্যের একটি অংশ থেকে ভাগ দিতে হয় সোর্সদের।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ফুফাত বোনের বান্ধবীর সহযোগিতায় সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। ধর্ষণের মূল হোতা পুলিশের সোর্স চান্দু মিয়া। তার বিরুদ্ধে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

১৬ জুলাই মধ্যরাতে নগরীর আগ্রাবাদে একটি বাসায় পুুুুলিশ চুরির আসামি ধরতে গিয়ে মারধর করে এক কিশোরকে। অপদস্ত করে তার মাবোনকে। এই অপমানে নিজ ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে ওই কিশোর। এর জন্য দায়ি করা হয় ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল ছাড়াও পুলিশের দুই সোর্সকে। পরে অবশ্য হেলালকে বরখাস্ত করা হলেও অধরাই থেকে যায় সেই সোর্সরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়াসায় আবারো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেলেন ফজলুল্লাহ
পরবর্তী নিবন্ধদুবাই ফেরত যাত্রীর শার্টের পকেটে ৬ কোটি টাকার স্বর্ণ