আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস-ভাবনা

এম. সামসুল হক | বৃহস্পতিবার , ১ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

আজ ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। এ বছরের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য চধহফবসরপং : উড় ঃযবু পযধহমব যড় িবি ধফফৎবংং অমব ধহফ অমবরহম.

মহামারী কোভিড১৯ সারা বিশ্ব জুড়ে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যেভাবে বিপর্যস্ত করেছে, অর্থনীতির চাকা যেভাবে স্তবদ্ধ করেছে, মোট কথা জীবন ও জীবিকার সকল পথ বাধাগ্রস্ত করেছে তার ধকল কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববাসীকে আরো বেশ কালক্ষেপণ করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির গতি সাময়িক স্লথ হলেও সংকট আজও বিদ্যমান। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব কি উন্নত, কি উন্নয়নশীল ও গরীব সব দেশ আজ দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক হতে পারেনি। শঙ্কার কথা সারা বিশ্বজুড়ে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ি বর্তমানে বিশ্বে প্রায় এক হাজার বিলিয়ন এর অধিক প্রবীণ মানুষ বিদ্যমান। সমস্যার কলেবর প্রতি নিয়ত বেড়েই চলেছেএই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর। দারিদ্র্যতা, একাকিত্ব, অবহেলা তাদের নিত্যসঙ্গী।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর “জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা” মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করে প্রবীণদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়। যেমন পরিবহনে কম ভাড়ায় যাতায়াত, হাসপাতালে সাশ্রয়ী মূল্যে আলাদা চিকিৎসা সেবা, বাসস্থান সুবিধা ও বয়োবৃদ্ধদের বয়স্ক ভাতা প্রদান ইত্যাদি।

আশার কথা সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করেছে তবে প্রাপকের সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণ আরো বাড়ানোর প্রয়োজন। বর্তমান সমাজ প্রবীণ বান্ধব নয়এ কথা বলা হলে তা অমূলক হবে না। প্রবীণ বয়সে শারীরিক ও মানসিক অসুবিধা সমূহ তাঁদের কাবু করে ফেলে, তখন তারা অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।

শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করে আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়াতে পারি না। বিষয়টি সমাজ ও রাষ্ট্রকে দায়িত্বশীল হিসাবে গ্রহণ ও প্রতিপালন করতে হবে।

দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটি” প্রবীণ জনগোষ্ঠীর অধিকার ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নিরন্তন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহিত আমরা সাধ্য অনুযায়ি প্রবীণদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা, সুরক্ষা প্রদানে নানা ভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি তবে এই কাজ অত্যন্ত দুরূহ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা না থাকলে প্রবীণদের জীবনে কোনদিন অনাবিল প্রশান্তি ও স্বস্তি আসবে না।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমোঘ পরিণতি ও চরম বাস্তবতা হচ্ছেবার্ধক্য। এই বার্ধক্য প্রবীণ নাগরিকদের ভিন্ন ভিন্নভাবে মোকাবেলা করতে হয়। সমাজ কাঠামো, পারিপার্শিক অবস্থা, অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা, বিনোদন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা স্তর ভেদে ভিন্ন প্রকৃতির। সুবিধা বঞ্চিত ও দুস্থ প্রবীণদের রয়েছে অফুরন্ত সমস্যা। নীরব কান্না ও অস্ফুট বেদনা নিয়েই তাদের কাল যাপন করতে হয়। ধনী গরীব সকল সিনিয়র সিটিজেনদের শেষ জীবনের নি:সঙ্গতা অসহায়ত্বের বেদনা কম বেশী একজন আর একজনের অনুরূপ।

বাংলাদেশে প্রাচীন কাল থেকে যৌথ পরিবার ব্যবস্থা চালু থাকার কারণে আমাদের প্রবীণরা অতীতে আর্থিক ও শারীরিক সমস্যা ছাড়া অন্য কোনরূপ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হননি, যা আজকের ভিন্ন পরিস্থিতি ও পেক্ষাপটের কারণে সবাই উদ্বিগ্ন।

এই পাহাড় সম সমস্যা মোকাবেলায় “দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটি” প্রতি নিয়ত সমাজের প্রথিতযশা প্রবীণ ব্যক্তিদের একই ছাতার নিচে আনায়ন করে সবার সম্মিলিত প্রয়াসে সকল প্রকার সমস্যা সমূহ সমাধানে বদ্ধপরিকর।

আমরা চাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক সংবিধানে প্রবীণদের যে সামাজিক নিরাপত্তা সন্নিবেশিত করেছেন তার সফল বাস্তবায়ন। দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের প্রত্যাশা পূরণে দৃঢ় ভূমিকা রাখতে হবে আজকে যারা রাষ্ট্র যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের। নৈতিক ও বাস্তবতার নিরিখে সরকারের অনুসৃত নীতিমালা প্রনয়নে তাদের সব সময় প্রবীণদের সুবিধা অসুবিধাগুলো মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক ভাবে পালিত আজকের এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যেখানে যে অবস্থানে আপনি আছেন সেই অবস্থান থেকে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি মমত্ব ও ভালবাসা নিয়ে একযোগে কাজ করলে নিশ্চয়ই আমরা প্রবীণ বান্ধব সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবো। আসুন, আজকের এই দিনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমরা লক্ষ্য পূরণে সম্মুখে এগিয়ে যাই।

আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

লেখক : জেনারেল সেক্রেটারী, দি সিনিয়র সিটিজেন্স

সোসাইটিচট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈশ্বিক মহামারীর বার্তা : প্রবীণদের সেবায় নতুন মাত্রা
পরবর্তী নিবন্ধএর শেষ কোথায়