চালের বাজারে আবার শুরু হয়েছে অস্থিরতা। এখন প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। ডাল,ভোজ্যতেল, রসুন, আদা,পেঁয়াজের পর নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চাল। গত কয়েকদিনে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
২৯সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘চালের বাজারে আবার সিন্ডিকেটের কারসাজি’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে চালের বাজার। গত এক মাস ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে দুই সপ্তাহ যাবৎ দাম যেন আরো লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্তবেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা ধানের দাম বৃদ্ধি ও মজুদ কমে যাওয়া অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিন্ডিকেট কারসাজি করে প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলেন মিল মালিকরা। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে পুুঁজি করে ধান–চালের দাম উঠানামা করার এসব আসাধু ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে নগরীর চাক্তাইর মিল মালিকরা বলছেন, গত দুই মাসে মণপ্রতি ধানের দামবেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও এখনই চাল আমদানিতে যাচ্ছে না সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও চাল আমদানিতে ধীরে চলো নীতিনেওয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, বাজারে চালের যোগানে কোনো ঘাটতি নেই। বিদেশ থেকে আমদানি করা হলে সেই চাল আর স্থানীয় চালে বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে। তবে গত রবিবার পর্যন্ত চালের বাজার চড়া ছিল।জেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে খুচরায় চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২থেকে ৩ টাকা। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘এ সময়ে চালের দাম একটু বাড়েই। কিন্তু শিগগিরই তা কমে আসবে। কারণ অগ্রহায়ণে নতুন ধান উঠবে।সে কারণে কৃষক বা ব্যবসায়ীরা পুরনো চালছেড়েদেবেন। তখন বাজারে চালের দাম কমে আসবে।’ খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের চাল আমদানির প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু এখনই চাল আমদানিতে যাচ্ছি না। কারণ গত কয়েকটি ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই চাল বাজারে রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীর হাতেও চাল রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়েও চাল আছে। এ অবস্থায় আমদানিতে গেলে আমনের ওপর প্রভাব পড়বে। কারণ স্থানীয় চালের সঙ্গে যখন আমদানি করা চালযোগ হবে তখন বাজারে চাহিদারচেয়েবেশি চাল থাকবে। তখন দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষকের স্বার্থ,ভোক্তার স্বার্থ সবকিছু চিন্তা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কোনও ধরনের কারসাজি নেই। চালের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে–প্রথমত, চালের চলতি মৌসুম শেষের দিকে। দ্বিতীয়ত, এবার সারাবছর কেটেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। প্রথমে হলো শিলাবৃষ্টি। এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল। তারপর দেশের ৩৩ জেলা জুড়ে বন্যা, যা এখনও চলছে। এছাড়া বছরজুড়ে করোনার তাণ্ডবতো রয়েছেই। এর বাইরে এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি। প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেছে বিধায় দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক–এমন দাবি ব্যবসায়ীদের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দাম বাড়ানোটা কারসাজি ছাড়া কিছুই নয়। ব্যবসায়ীরা নানা রকমখোঁড়া যুক্তি খাঁড়া করলেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আসলে বাজারে যারা বড় সরবরাহকারী, তারা দাম বাড়িয়ে দিলে অন্যরাসেটা অনুসরণ করে। অকারণে কারা দাম বাড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
করোনার কারণে মানুষ নানা ধরনের সংকটে রয়েছেন। মানুষের আয় কমে গেছে। হাতে জমানো টাকাও শেষ হয়ে গেছে। এ সময় অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। এমন অবস্থায় কোনও মহলের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন। সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে নজরদারি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।