প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পূর্বে দেশ ও জনগণের জন্য ভাল কিছু করে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ তাকে ৭৪তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানালে শেখ হাসিনা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেছে ডাক অধিদপ্তর। সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ১০ টাকা মূল্যমানের এই স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা–মা সব হারিয়ে রিক্ত, নিঃস্ব হয়ে এই দেশে কাজ করা, এটা খুবই কঠিন। কিন্তু তারপরেও শুধু একটা কথা চিন্তা করেছি–যে দেশটাকে এবং দেশের মানুষকে আমার বাবা এত ভালবেসেছেন তাদের জন্য আমাকে কিছু করে যেতে হবে। তার (জাতির পিতা) স্বপ্নটা যেন অপূর্ণ না থাকে সেটা যেন পূর্ণ করতে পারি। খবর বাসস ও বিডিনিউজের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেটাই জাতির পিতা চেয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তার এই আকাঙ্খাটা আমরা জানি, শুনেছি। সে কারণেই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি– এই দেশটাকে যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। দেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে ঐটুকুই আমার প্রচেষ্টা আর কিছু না, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কারণ, সকলের সহযোগিতাতেই বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। তিনি বলেন, হয়তো এই করোনাভাইরাসটা না আসলে আমরা আরো অনেক কাজ করতে পারতাম। তারপরেও যত বাধা বিঘ্নই আসুক সেটা অতিক্রম করার মত ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষ রাখে। সেজন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় গত রাতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং বলেন, তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মেধা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার মৃত্যু আমাদের তথা রাষ্ট্রের জন্য এক বিরাট ক্ষতি। মাহবুবে আলমের কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এবং ধীর স্থিরভাবে সবকিছু বিবেচনা করতেন। অনেক জটিল মামলার তিনি ভালভাবে সমাধান করেছিলেন। গত কয়েকটা বছরে অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আমরা এই জায়গাটায় এসেছি। এ সময় বিভিন্ন ঘাত–প্রতিঘাত যথাযথভাবে মোকাবেলা করেই তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ১০ টাকা মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের ডেটাকার্ডও প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করা হয়েছে। স্মারক ডাকটিকেট ও উদ্বোধনী খাম ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরো থেকে বিক্রি করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য জিপিও বা প্রধান ডাকঘরসহ দেশের সব ডাকঘর থেকে এ স্মারক ডাকটিকেট বিক্রি হবে। উদ্বোধনী খামে ব্যবহারের জন্য চারটি জিপিওতে বিশেষ সিলমোহরের ব্যবস্থা আছে।
প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বলেন, শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছেন তার বড় হাতিয়ার ডিজিটাল অবকাঠামো। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচিকে দেশের অভাবনীয় অগ্রগতির মাইলফলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা তার সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন– এটাই হচ্ছে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. নূর–উর–রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক, টেলিকম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসীনুল আলমসহ টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং ডাক অধিদপ্তরসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সময় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত ছিলেন।
‘শেখ হাসিনা : দুর্গম পথের নির্ভীক যাত্রী’ মোড়ক উন্মোচন : ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সম্পাদনায় ‘শেখ হাসিনা : দুর্গম পথের নির্ভীক যাত্রী’ শিরোনামনের বই গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অনলাইনে যঃঃঢ়ং://হধমধফহবংি.সুহধমধফ.পড়স:৮৪৮৪/ ডিজিটাল এই বইটি সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে ৩৩৬ পৃষ্ঠার এই তথ্য–চিত্রবহুল ঐতিহাসিক বইটি। রয়েছে ১৯টি নিবন্ধ এবং একটি বিশেষ ফটো অ্যালবাম।
দুপুরে অনলাইনে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। জয়ীতা প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছে। বইটির সম্পাদক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ সময় ওয়েবিনারে সংযুক্ত ছিলেন।