অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে জালিয়াতি–প্রতারণায় আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ গতকাল সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। জালিয়াতি ও প্রতরণার অভিযোগে সাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কয়েক ডজন মামলার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার এই অস্ত্র আইনের মামলারই প্রথম রায় এল। অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই সর্বোচ্চ সাজা। পাশাপাশি আরেকটি ধারায় সাহেদকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে। তবে দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে তার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবনই প্রযোজ্য হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আমাদের এই সমাজে সাহেদের মতো ভদ্রবেশে অনেক লোক রয়েছে, যাদের জন্য এই মামলার রায় একটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে। বিচারক আরো বলেন, সাহেদ ২০ লাখ টাকা লোন নিয়ে গাড়িটি ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি আদালতের কাছে স্বীকার করেননি। সাহেদ আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য দেন। তিনি অত্যন্ত চালাক ও ধুরন্ধর ব্যক্তি। গাড়িতে অস্ত্র রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালতের কাছে তিনি কোনো অনুকম্পা পেতে পারেন না। খবর বিডিনিউজের।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু রায়ের পর বলেন, যে গাড়ি থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার মালিকানা যাচাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে রায়ে। সাহেদ যে অপরাধী তা মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ রায় সমাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
আদালতে উপস্থিত সাহেদ রায় শুনে অনেকটাই নিবির্কার ছিলেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তবে সাহেদের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মাত্র ৮ কার্যদিবসে মামলা শেষ হয়ে গেল। তাড়াহুড়ো বেশি হয়ে গেল। ন্যায়বিচার পেলাম না। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
অভিযোগ গঠন থেকে মাত্র আট কার্যদিবসে এ মামলা রায়ের পর্যায়ে আসে। বাংলাদেশে এত কম সময়ে এর আগে আর কোনো ফৌজদারি মামলার রায় হয়নি বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু জানান।
রিজেন্ট হাসপাতালে কোভিড–১৯ পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাহেদকে। ওই মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে থাকার সময় ১৮ জুলাই রাতে সাহেদকে নিয়ে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তার একটি গাড়ি থেকে গুলিসহ একটি পিস্তল এবং কিছু মাদক জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র আইনে এই মামলা করে পুলিশ। এরপর গত ৩০ জুলাই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. সাইরুল ইসলাম। গত ২৭ অগাস্ট অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পর এ মামলার কাজ এগিয়েছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। রাষ্ট্রপক্ষে ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ১১ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত। আসামি সাহেদ গত ১৬ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, যে অস্ত্রের কথা এ মামলায় বলা হচ্ছে, সেটা তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়নি। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ২০ সেপ্টেম্বর বিচারক রায় ঘোষণার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখেন।
আমি ন্যায়বিচার পাইনি : অস্ত্র মামলায় আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে রিজেন্ট গ্রুপ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের। এ রায়ের পর সাহেদ বলেছেন আমি ন্যায়বিচার পাইনি। গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে সাহেদকে এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এসময় তাকে স্বাভাবিক দেখা যায়। নিশ্চুপভাবে অনেকটা ভাবলেশহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে তিনি রায় শুনেন। এসময় ভেতরে তিনি কোনো কথা বলেননি বা প্রতিক্রিয়া দেখাননি। দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে এজলাস কক্ষ থেকে সাহেদকে বের করে আনা হয়। প্রিজনভ্যানে তোলার সময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সাহেদ বলেন, আমি ন্যায়বিচার পাইনি, হাইকোর্টে আপিল করবো। খবর বাংলানিউজের।
সাহেদের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রায়ের পর বলেন, দ্রুততার সঙ্গে মামলার বিচার চলার সময়ই আমাদের আশঙ্কা তৈরি হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের মধ্যে দিয়ে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো। অস্ত্র মামলায় সাহেদকে গতকাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।