চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে চট্টগ্রাম থেকে কাজ নিয়ে বিদেশে যেতে পেরেছেন মাত্র ১১ জন। অথচ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে কর্মসংস্থানের জন্য প্রতি মাসেই বিদেশে গেছেন তিন হাজারের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাস মহামারী বৈদেশিক কর্মসংস্থানে কতটা ধাক্কা দিয়েছে, চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের এই পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে মোট সাত লাখ ১৫৯ জন কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ৩৩ হাজার ৪৬৪ জন। বিডিনিউজ
নতুন করে আরও অনেকেই বিদেশে চাকরি করতে যেতে আগ্রহী কিন্তু মহামারীর মধ্যে অধিকাংশ দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল এখনও বন্ধ থাকায় এবং অনেক দেশ জনশক্তি নেওয়া বন্ধ রাখায় পুরো প্রক্রিয়াই থমকে আছে।
উল্টো প্রায় দেড় লাখ মানুষ বিদেশে কাজ হারিয়ে এই সঙ্কটের সময়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
মহামারীর আগে বা মহামারী শুরুর পর যারা দেশে এসে আটকা পড়েছিলেন তাদের অধিকাংশই ফিরতে পারেননি এখনও।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে চাকরির জন্য নতুন ভিসা নিয়ে বিদেশ গেছেন মোট নয় হাজার ৮১৭ জন।
তাদের মধ্যে জানুয়ারি মাসে তিন হাজার ৫৬৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন হাজার ১৫০ এবং মার্চ মাসে তিন হাজার ৯৩ জন চাকরির জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে গেছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয় মার্চ মাসে। এরপর লকডাউন শুরু হলে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দুই মাসের বেশি সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকে।
ফলে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম থেকে কর্মসূত্রে বিদেশগামীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ছয় জনে। এরপর মে ও জুন মাসে নতুন কেউ বিদেশে যাননি। জুলাই মাসে একজন, আগস্ট মাসে তিন এবং সেপ্টেম্বরে একজন বিদেশ গেছেন।
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের উপ-পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, “এ বছরের শুরুর তিন মাসে বিদেশগামীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি ছিল কিন্তু মহামারী শুরুর পর তা প্রায় শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে।”
তিনি বলেন, “মহামারীর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশে কর্মী যাওয়া একপ্রকার বন্ধই আছে। এতে করে বৈদেশিক কর্মসংস্থান একপ্রকার থমকে গেছে বলা যায়।”
তবে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে অক্টোবর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং তিনটি ক্যাটাগরিতে ওমান সীমিত আকারে জনশক্তি নেওয়া শুরু করতে পারে বলে আভাস দেন এই কর্মকর্তা।
চট্টগ্রামের পুরনো অনেক কর্মী মহামারীর আগে ছুটিতে এসে দেশে আটকে রয়েছেন জানিয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, “তাদের যাওয়ার প্রক্রিয়া এখন শুরু হচ্ছে।”
জেলা জনশক্তি, কর্মস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তারা জানান, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নতুন চাকরি প্রত্যাশীদের এখন আর নেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন দেশে চাকরির বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। বিমান চলাচলও এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জনশক্তি রপ্তানি আবার আগের ধারায় ফিরবে না বলেই মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন।
চলতি বছরে বিদেশে সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ধরা হলেও কোভিড-১৯ এর কারণে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মাত্র এক লাখ ৮১ হাজার ২৭৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।