বহুল প্রত্যাশার পতেঙ্গা–ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড অনানুষ্ঠানিকভাবে চালু করার সংবাদ পত্রপত্রিকায় এসেছে। বিমানবন্দর সড়কের ভোগান্তি এবং যানজট এড়াতে এ কাজ করা হয়েছে। এতে করে জিইসি মোড় থেকে চল্লিশ মিনিটে বিমানবন্দরে আসা–যাওয়া সম্ভব হচ্ছে বলে জানানো হয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের যান চলাচলে গতি আনতে আউটার রিং রোড নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার এই প্রকল্পটির আওতায় পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের সন্নিকট পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটারের চার লেনের একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সাগরিকার জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ওভারপাসসহ ফিডার রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হলে সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এজন্য আরো ছয় মাস সময় লাগবে। তবে রিং রোড থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফিডার রোডটি চালু হওয়ার আগে টোল রোডের সাথে যুক্ত করে রাস্তাটি চালু করা হয়েছে। এতে ১৫.২ কিলোমিটার আউটার রিং রোড এবং ৫ কিলোমিটারের টোল রোড ব্যবহার করে যে কেউ ইচ্ছে করলে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাটে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছতে পারবেন।
সড়কটি চালু করা প্রসঙ্গে সংবাদে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কে এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। বন্দরকেন্দ্রিক অনেক গাড়ি এবং এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ের কাজের জন্য বিমানবন্দর সড়কে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছিল। এক্ষেত্রে মূল শহর থেকে বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা যাতায়াতে মানুষ যাতে কষ্ট থেকে রক্ষা পান সেজন্য ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তা চালু করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বহু গাড়ি এখন বিমানবন্দর সড়কের পরিবর্তে আউটার রিং রোড ব্যবহার করছে। এর ফলে এই রাস্তায় গাড়ির চাপ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।
যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নকে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠি বলা হয়। যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা উন্নয়নকে শুধু ব্যাহতই করে না, দেশের ব্যবসা–বাণিজ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সব খাতে দেখা দেয় মন্থরগতি। তাই ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে আধুনিক, নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামোর ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। গত ১০ বছরের হিসাবে দেখা গেছে, জনগণের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে স্বস্তি আনতে ২৭৬ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। নতুন করে আরো ৩৪১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক হাজার ১৪০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে র্যাম্পসহ ৪৬.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের কাজ চলছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন শেখ হাসিনা। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। হঠাৎ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অর্থনীতির স্থবিরতার মধ্যেও থেমে নেই উন্নয়ন কাজ। এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও চলছে পুরোদমে। করোনার কারণে কিছু সময় বন্ধ থাকার পর সরকারের অন্য অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পগুলোর কাজও ফের শুরু হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, নানা সময়ে যানজটে স্থবির থাকে চট্টগ্রামের বারেক বিল্ডিং থেকে শাহ আমানত বিমান বন্দর সড়ক। কোনো কোনো দিন মাত্র ১৫ কিলোমিটারের এই রাস্তা পেরোতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। এতে দুর্ভোগের শেষ নেই যাত্রীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশও। দুটি প্রধান ইপিজেড, বন্দর, এয়ারপোর্ট, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল স্থাপনা, কয়েকটি কন্টেইনার ডিপো মিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে নগরীর এই দক্ষিণাংশে। ফলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের চলাচল এ সড়কে। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি এমন ভয়ানক যানজটের কবলে পড়ে নাকাল মানুষ। পুরো সড়কেই বিশৃঙ্খলভাবে চলছে যানবাহন। বিশেষ করে বন্দরে পণ্যবাহী যানবাহনের প্রবেশে ধীরগতি, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি আর টানা বর্ষণে খানাখন্দ। এসব মিলে পুরো মহানগরে সবচেয়ে বেশি যানজট এখন এই সড়কে। তাই বিমানবন্দর সড়কের ভোগান্তি এবং যানজট এড়াতে পতেঙ্গা–ফৌজদারহাট আউটার রিং রোড চালু করা জরুরি ছিল। হয়েছে। এতে করে বিশ কিলোমিটারের বেশি নতুন সড়ক ব্যবহার করে জিইসি মোড় থেকে চল্লিশ মিনিটে বিমানবন্দরে আসা–যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। সড়কটি পুরোদমে চালু হলে নগরীর যান চলাচলে গতি আসবে বলে আমরা মনে করি।