খাগড়াছড়িতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী ও আকবর শাহ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশ। বাকী দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আজিজ আহমেদ জানান, বিষয়টি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। খুব দ্রুত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে পুলিশ আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রশীদ বলেন, পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। পুলিশ জানায়, বুধবার রাত আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বলপেয়ে আদম এলাকায় দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী নারীকে (২৬) গণধর্ষণ করে ৯ দুর্বৃত্ত। মূলত: তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যেই ঘরে ঢুকেছিল। তারা ঐ বাড়ি থেকে তিন ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন লুট করে বাইরে থেকে দরজা আটকে চলে যায়। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষণের শিকার নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালের ভর্তি করে।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, ২০০৫ সালে ভাইকে এবং ২০০৬ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকেই অসহায় এই নারী মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন। ওই বাড়ির মালিক বিন্দু লাল চাকমা বলেন, আমরা সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। বাড়ির দরজা খোলার শব্দ শুনে আমার স্ত্রী এগিয়ে গেলে ততক্ষণে তারা ঘরে ঢুকে তার হাত–মুখ বেঁধে ফেলে। বিন্দু লাল চাকমার স্ত্রী পুষ্প রানী চাকমা জানান, তারা সংখ্যায় নয়জন ছিলেন। ডাকাতদলের সদস্যরা একটি কক্ষে ঐ প্রতিবন্ধী নারীকে হাত, পা ও মুখ ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে ধর্ষণ করেছে। তিনি আরো বলেন, ডাকাত দল আমার কানের দুল, আংটিসহ অন্তত ৩ ভরি স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেট নিয়ে গেছে। ঘরের বাইরে থেকে দরজার হুক মেরে বৃহস্পতিবার ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে তারা চলে যায়।
প্রতিবেশী তপন জ্যোতি চাকমা জানান, তাদের চিৎকার শুনে আমরা ভোর বেলায় এসেছি। এসময় প্রত্যেকের হাত পা মুখ বাঁধা ছিল। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর তারা এসে সবাইকে উদ্ধার করে। মেয়েটির আত্মীয়রা জানান, ধর্ষকরা ওই এলাকার সেটেলার। তারা নয় জন মিলে অসহায় এই নারীকে ধর্ষণের পর তার বাড়িতেও লুটপাট চালায়।
এদিকে আমাদের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানিয়েছেন গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় আমলী আদালতের বিচারক মোর্শেদ আলমের আদালতে ভিকটিমকে হাজির করে পুলিশ। আদালত ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ শেষে পরিবারের জিম্মায় ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দেয়। পরে পুলিশ প্রহরায় তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।