উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখলদাররা উচ্ছেদ হচ্ছে না। নানা কারণে বিলম্বিত হচ্ছে উচ্ছেদ কার্যক্রম। গণমাধ্যমে সমালোচনা হলে দুয়েকদিন সামান্য উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তারপর আবার বন্ধ থাকে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের এক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের সময় এডিবি মাস্টার প্ল্যান ও বিএস সিট অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর প্রস্থ ছিল ৮৮৬.১৬ মিটার। কিন্তু সাম্প্রতিক চালানো জরিপে শাহ আমানত সেতুর নিচে বর্তমানে ভাটার সময় নদীর প্রস্থ ৪১০ মিটারে নেমেছে। তাছাড়া কর্ণফুলী ব্রিজের উত্তর অংশে ৪৭৬ মিটার নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে নদীর দক্ষিণ অংশে ব্যাপক স্রোতের সৃষ্টি হয়। স্রোতের এই তীব্রতার চাপ কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তে শাহ আমানত ব্রিজের সংযোগ সড়কের বর্ধিত অংশের পিলারে পড়ছে; যা শাহ আমানত সেতুর জন্য বিপজ্জনক। বন্যা বা সাইক্লোন হলে শাহ আমানত সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, এডিবির মাস্টারপ্ল্যান ও বিএস শিট অনুযায়ী রাজাখালী খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৮৯৮ মিটার। কিন্তু বাস্তবে তা মাত্র ৪৬১ মিটার। চাক্তাই খালের মুখে কর্ণফুলীর প্রস্থ ৯৩৮ মিটার হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আছে ৪৩৬ মিটার। ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় প্রস্থ হওয়ার কথা ৯০৪ মিটার। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণ করায় সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ মিটারে।
চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের অভিযোগ, কর্ণফুলী দখলের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা বন্দরের। জরিপ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে কর্ণফুলী নদীকে রক্ষায় ছয়টি সুপারিশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে কর্ণফুলী মেরিনার্স পার্ক, সোনালী মৎস্য আড়ত, বেড়া মার্কেটসহ কর্ণফুলী নদী দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা। নিয়মিত ড্রেজিং করে ও প্রয়োজনীয় নদীশাসনের মাধ্যমে বাংলাবাজার, সদরঘাট, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকার নৌবন্দর ঝুঁকিমুক্ত করা। নদীর পাড় স্থায়ীভাবে চিহ্নিত করা এবং প্রস্তাবিত হাইড্রো মরফলোজিক্যাল মডেল স্টাডির মাধ্যমে কর্ণফুলীর মোহনা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রবাহ ও নদীশাসনের কাজ সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা নেওয়া। সংগঠনটির পক্ষে অভিযোগ করা হয়, ইতোমধ্যে নদীর পাড়ের জায়গা স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ইজারা দিয়ে চলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কর্ণফুলী নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে ২০১০ সালে একটি রিট উচ্চ আদালতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। এরপর আদালতের নির্দেশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসন। ২০১৫ সালে তৎকালীন সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সামিউল মাসুদ প্রতিবেদনও জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমি অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ৬৪০০ একর সরকারি ভূমি নিয়ে মামলা আছে। বাকি ভূমি নিয়ে মামলা নেই। স্থানীয়ভাবে ১৫৮ একর ভূমির আনুমানিক মূল্য ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ওই প্রতিবেদনে ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়।
জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন জমা হওয়ার পরও কয়েক দফা শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ২ হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দেন হাই কোর্ট। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, নতুন করে গড়ে উঠছে স্থাপনা।
আজ বিশ্ব নদী দিবস : আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর বিদ্যমান সংকট, দখল, দূষণ ও নাব্যতা রক্ষার্থে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করেছে গ্রিন প্লানেট নামের সংগঠন। সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্থপতি মো. মিজানুর রহমান।