সঙ্কটকালে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে টিসিবির অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অধিকাংশ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের দিনের বরাদ্দের পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাচ্ছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের যোগান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিপণনকারী ই–কমার্স সাইটগুলো। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত রোববার ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ নামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। প্রথম সারির ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান চালডাল, স্বপ্ন, সিন্দাবাদ, সবজিবাজার ও যা–চাই ডটকম প্ল্যাটফর্মকে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পরে ধীরে ধীরে মোট ৩০টি ই–কমার্স সাইট এর সঙ্গে যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি ই–কমার্স সাইটকে তিন দিন পর পর ১৫০০ কেজি করে পেঁয়াজ দেবে টিসিবি। একজন গ্রাহক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে শিপমেন্ট চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিতে পারবে। গত সোমবার প্রথম দিনে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করতে পারে শুধু স্বপ্ন অনলাইন ও চালডাল ডটকম। দুপুরে প্রদর্শনের পর বিকাল নাগাদ দিনের বরাদ্দ ফুরিয়ে যায় বলে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। ই–কমার্স সাইট সিন্দাবাদ ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জীশান কিংশুক হক বলেন, টিসিবির পেঁয়াজে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া। প্রথম ধাপে ১৫০০ কেজি পেঁয়াজ সংগ্রহ করে মঙ্গলবারই আমরা বিপণন শুরু করি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পেঁয়াজ স্টকআউট হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমরা শুক্রবার পেঁয়াজের দ্বিতীয় চালান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিসিবি শুক্র ও শনিবার বন্ধ। তাই আবার রোববার পেঁয়াজ হাতে পাওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কীভাবে সামলাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে তো স্টকআউট দেওয়া আছে। কিন্তু ক্রেতারা সরাসরি অফিসে ফোন করে বসছেন। আমরা বলেছি, পণ্য হাতে পাওয়ার পর আবার চালু হবে। এই পরিস্থিতিতে যাদের প্রয়োজন তারা যেন পণ্য হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যান সেই সিস্টেম দাঁড় করিয়েছি। ক্রেতা চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন বিপণনের এই বরাদ্দ আরও বাড়াবে বলে আশা করেন কিংশুক।
আরেক বিপণন প্রতিষ্ঠান যা–চাই ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ বলেন, মঙ্গলবার বিপণন শুরুর ২ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজ স্টকআউট হয়ে গেছে। এখনও অনেক অর্ডার আসছে। পেঁয়াজ না থাকায় আমরা ডেলিভারি দিতে ৭ দিন সময় নেব বলছি– তারপরেও অর্ডার আসছে। এমনিতে পেঁয়াজ থাকলে আমরা প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন ডেলিভারি দিয়ে দিই। যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল মনে হচ্ছে। মনে হয় দিনে ২০০০ কেজি বরাদ্দ দিলেও ক্রেতা চাহিদা মিটবে না, বলেন আজিজ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ট্রাকসেলের পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে টিসিবি। এতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়ার বিষয়টি আমরাও লক্ষ করেছি। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের বরাদ্দ আরও বাড়ানো যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে। বিশেষ করে আগামী মাসের শুরুতে টিসিবির এলসি করা পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করবে। তখন এই বরাদ্দ আরও বাড়ানো যাবে। সমপ্রতি প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর দেশের বাজারে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়তে শুরু করে। বাজার ঠিক রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় টিসিবি।