ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে গত ২৫ মার্চ নমুনা পরীক্ষা শুরুর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামেমে করোনার নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। প্রথমদিন ৩ জনের, ২য় দিন ৫ জনের এবং ৩য় দিন ৭ জনেরসহ প্রথম তিনদিনে মোট ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এই ল্যাবে। যদিও প্রথম তিনদিনের এসব নমুনায় একজনেরও করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়নি। নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালুর ৯ দিনের মাথায় ৩ এপ্রিল প্রথম (একজন) করোনা রোগী শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। নগরীর দামপাড়া এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির নমুনায় ওই দিন করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে- নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম চালুর পর ৬ মাসের মাথায় (২৫ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ১ লাখের ঘরে পৌঁছেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এই সময়ে মোট ১ লাখ ৮৫১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। তবে ৬ মাসে নমুনা পরীক্ষার এ সংখ্যা চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশেরও কম। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি। এর মধ্যে কেবল মহানগরেই প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের বসবাস। আর ১৫ উপজেলায় বাসিন্দার সংখ্যা আরো বেশি। যদিও ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৫ জন উল্লেখ আছে। কিন্তু গত ৯ বছরে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সে হিসেবে মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটির কাছাকাছি বলে অনেকের ধারণা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়- চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মানুষও নমুনা পরীক্ষার আওতায় আসেনি গত ৬ মাসে। মে থেকে জুলাই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে নমুনা পরীক্ষা হলেও পরবর্তীতে পরীক্ষা নিয়ে মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েছে বলে উল্লেখ করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, এক সময় নমুনা পরীক্ষার চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এমনকি পরীক্ষার জন্য ঢাকায়ও নমুনা পাঠাতে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কমতে শুরু করে। মাঝে-মধ্যে নমুনা সংকটেও ভুগতে হয়েছে ল্যাবগুলোকে। রিপোর্ট পেতে বিলম্ব, পরীক্ষায় ফি নির্ধারণসহ আরো বেশ কিছু কারণে নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কমে যায় বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে- ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরীক্ষাকৃত ১ লাখ ৮৫১টি নমুনার মধ্যে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৫১৭ জনের। হিসেবে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের গড় হার ১৮.৩৬ শতাংশ।
এদিকে পরীক্ষাকৃত মোট নমুনার মধ্যে মহানগরের বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭০ হাজার ৫৮টি। এতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ২৫৭ জনের। আর উপজেলা পর্যায়ের ২৮ হাজার ৬৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে এই সময়ে। এতে ৫ হাজার ২৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। হিসেবে মহানগরে করোনা শনাক্তের হার ১৮.৯২ শতাংশ। আর উপজেলায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৮.৩৪ শতাংশ।
অন্যদিকে পরীক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রথম তিন মাসে পরীক্ষাকৃত নমুনার প্রায় তিনগুণ বেশি পরীক্ষা হয়েছে পরবর্তী তিন মাসে। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়- প্রথম তিন মাসে (২৫ মার্চ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত) মোট ২৫ হাজার ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা হয় চট্টগ্রামে। এর মধ্যে মহানগরের বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা হয় ১৫ হাজার ৯৯৫ জনের। আর উপজেলা পর্যায়ের নমুনা পরীক্ষা হয় ৯ হাজার ৩৩৮ জনের। সবমিলিয়ে ২৫ হাজার ১৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭ হাজার ২২০ জনের করোনা শনাক্ত হয় ওই সময়ে।
হিসেবে দেখা যায়- অবশিষ্ট ৭৫ হাজার ৭২১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে পরবর্তী তিন মাসে। যা প্রথম তিন মাসে পরীক্ষাকৃত নমুনার ৩ গুণ। আর প্রথম তিন মাসে (২৪ জুন পর্যন্ত) আক্রান্তদের মাঝে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয় চট্টগ্রামে। তবে গতকাল (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আক্রান্তদের মাঝে মৃত্যুর এ সংখ্যা ২৮৬ জন। আগের তুলনায় সামপ্রতিক সময়ে রোগী শনাক্তের হার অনেক কমেছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তবে শীত মৌসুমে আরো এক দফায় করোনার ঢেউ আসতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে সিভিল সার্জন বলছেন- করোনা সংক্রমণ কমে গেছে বা আর আক্রান্তের আশঙ্কা নেই, এমন ধারণা ভুল। সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে মাস্ক না পড়লে, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে না চললে আক্রান্তের হার আবারো বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।