কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে বারবার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির উদ্বেগ নিয়ে সোচ্চার হয়েছে এলাকার জনগণ। এ নৌ-রুটে যাত্রী পরিবহনে অব্যবস্থাপনা নিরসন ও সেতু নির্মাণের দাবিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত রবিবার মহেশখালী চ্যানেলের বাঁকখালীর মোহনায় নৌ দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্র আশরাফুল মুহাম্মদ তোফাইলের সহপাঠীরা এবং মহেশখালীর ছাত্রসমাজ নামের একটি ছাত্র সংগঠন।
২০ সেপ্টেম্বর মহেশখালী চ্যানেলে ফিশিং ট্রলারের সাথে গামবুটের মুখোমুখি সংঘর্ষে নদীতে ছিটকে পড়ে তিন দিন ধরে সাগরে নিখোঁজ ছিল চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল মোহাম্মদ তোফাইল। তাকে উদ্ধারের সরকারি তৎপরতার গাফিলতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় জাগ্রত ছাত্র সমাজ যখন বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করছিল তখনও তোফাইলের লাশের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। মানববন্ধন চলাকালে সকাল ১০টায় সোনাদিয়া দ্বীপের মগচর নামক স্থান থেকে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে মরদেহটি তোফাইলের বলে নিশ্চিত হন।
এদিকে মহেশখালী ছাত্রসমাজ নামের আন্দোলনকারী একদল ছাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তাদের দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন। ছাত্ররা বলেন, মহেশখালী কক্সবাজার নদীপথে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার প্রায় ৫ লক্ষ অধিবাসী নিরাপত্তা ঝুঁকিতে যাতায়াত করছে। এই ফেরিঘাটটি স্থানীয় গুটিকয়েক প্রভাবশালী নেতার হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে। তারা ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট দিয়ে যাত্রী পরিবহনে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। যাত্রী হয়রানি ও অনিয়ম থেকে দুটি দ্বীপের জনগণকে রক্ষা করতে অবিলম্বে মহেশখালী-কক্সবাজার সেতু নির্মাণ করা হোক।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান আন্দোলনরত ছাত্রদের দাবি সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করার আশ্বাস দেন। এ সময় সোনাদিয়া চরে নিখোঁজ আশরাফুল মোহাম্মদ তোফাইলের লাশের সন্ধান পাওয়ার খবর আসে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজুর রহমান জানান, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সোনাদিয়ার মগচরে ভেসে আসা কলেজ ছাত্র আশরাফুল মো. তোফাইলের লাশ উদ্ধারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে জানান, তোফাইলের অভাব পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ঘাটের অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্যে। এছাড়া মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে প্রত্যেক বোটে লাইফ জ্যাকেট রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং প্রশাসন তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করবেন বলে জানান।
অপরদিকে উত্তেজিত ছাত্রদের মানববন্ধন চলাকালে প্রশাসনের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাস্বরূপ মহেশখালী জেটিঘাট দিয়ে স্পিড বোটের যাত্রীদের বাধ্যতামূলকভাবে লাইফ জ্যাকেট পরতে যাত্রীদের সতর্ক করছেন মহেশখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুইচিং মং মারমা।
পরে বিকেল ৪টায় উপজেলার সিপাহীর পাড়ায় তোফাইলের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এসময় স্বজন ও সহপাঠীদের আর্তনাদে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জানাজায় উপস্থিত সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে শীঘ্রই মহেশখালী চ্যানেলে ফেরি সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, কলেজ ছাত্র আশরাফুল মো. তোফাইল উপজেলার ছোট মহেশখালীর সিপাহীর পাড়া গ্রামের মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র।