পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা ছিল বছরজুড়ে। বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে। বর্তমানে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সারাদেশের বাজার। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ, ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, পেঁয়াজের বাজার সামাল দিতে নতুন করে আরো এক লাখ ১৬ হাজার ৮৯৬ টন আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) নিয়েছে ৪০ আমদানিকারক। ২৬৪টি আইপির বিপরীতে এই আইপি সংগ্রহ করেন তারা। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৮টি দেশ থেকে ৪৮১ আইপির বিপরীতে এক লাখ ৯৬ হাজার ২৮৬ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেয়া হয়েছে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের (প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন স্টেশন) উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল। অন্যদিকে পাইকারিতে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে খুচরা বাজারে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত। এদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্কহার প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
করোনা মহামারির সময় হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষের ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজির অন্ত নেই। এই উঠছে, আবার নামছে। বলা অনাবশ্যক যে পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ল, কী কারণে বাড়ল তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেন বছরের এ সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, এর মূলোৎপাটনও করতে হবে। কে বা কারা পেঁয়াজের এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। যে বা যারা দেশের মধ্যে সিন্ডিকেট করে দেশ, সরকার ও দেশের মানুষকে বেকায়দায় ফেলে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া জরুরি। তারা কখনও দেশের মানুষের ভালো বা কল্যাণ চায় না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা জরুরি। চাহিদা ও সরবরাহে সামঞ্জস্য রাখতে না পারলে বাজারে তার প্রভাব পড়বেই। এসবের জন্য বাজার মনিটরিং যথাযথ হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবসায়ীরা যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে। আরো কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। যেমন পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পুলিশের বখরা আদায় বন্ধ করতে হবে। পথে পথে মাস্তানদের চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ। সার্বিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটালেই হবে না, বিশ্ববাজারে নিজেদের পণ্য বা সেবা ছড়িয়ে দিতে হবে। সেখানে দামের ওঠানামার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন এবং চাহিদার সামঞ্জস্য সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আমদানির পাশাপাশি রপ্তানির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। এতে শুধু ভোক্তা বাজার নয়, আর্থিক বাজারেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ যেকোনো রাষ্ট্রের সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ অনেক। সামপ্রতিককালে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়ক ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নীতিতে বেশ কিছু সংস্কার করেছে। বিনিয়োগ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সহায়ক স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজমান। বেসরকারি বাণিজ্য খাতের প্রবল আগ্রহের কারণেই বাংলাদেশ বাজার অর্থনীতির অনুকূলে দ্রুত বিভিন্ন কার্যকরী প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর ফলে মাঝারি মানের কিন্তু সুষম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে।
বাজারে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে কাজ করতে হবে। তার জন্য জরুরি সিন্ডিকেট দূর করা। এ ছাড়া বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীরা যেন কোনোভাবেই সিন্ডিকেট করতে না পারে, সেদিকে সরকারের লক্ষ রাখতে হবে। এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। সরকারকে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হবে।