গত ৬ মার্চ পালিত হয়েছে ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৪’। এই দিনে সরকারিভাবে অনেক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পাট খাতে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বড় ফারাক তুলে ধরা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমছে। চলতি (২০২৩–২৪) অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এ খাতের রপ্তানি আয় কমে হয়েছে ৫৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। পাটের সীমাহীন সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টিক, পলিথিন বা সিনথেটিক পণ্যের লাগামহীন প্রসারে মার খাচ্ছে পাট। সেই সঙ্গে অতীতের কোনো কোনো সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তও এই শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় পাট ও পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেশ কিছু বন্ধ পাটকল চালু করা হয়।
আমাদের অগোচরে ঢুকে গেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক। এসব দৈনন্দিন কাজে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য হিসেবে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা জানি না–এই পলিথিন কতটা ভয়ংকর! কতটা ক্ষতি করছে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের। পলিথিন এমন একটি পদার্থ যা পচন অযোগ্য। এমনকি পলিথিন পোড়ালে এর উপাদান পলিভিনাইল ক্লোরাইড কার্বন মনোঅক্সাইড উৎপন্ন করে বায়ু দূষণ করে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসেই জেলসহ ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। তবু পলিথিনের ব্যবহার থামছে না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বলছে, ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি পলিথিনের ব্যাগ জমা হচ্ছে। অন্য এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি করে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসাবে শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামে এবং অন্যান্য শহরেও পলিথিনের ব্যবহারে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা। গবেষকরা বলছেন, বর্তমানের পলিথিন দূষণের মাত্রা বজায় থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ সাগরে মাছের চাইতে পলিথিনের খণ্ডিত অংশের সংখ্যা বেশি হবে। বিষয়টি কতটা উদ্বেগের তা আমরা হয়তো অনেকেই অনুমান করতে পারছি না।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামকে পলিথিনমুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছিল। এই লক্ষ্যে সার্কিট হাউসে এ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভায় ১২ টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ছিল : পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সেজন্য পাটজাত পণ্যের উৎপাদন, ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে; পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে হবে; স্কুল–কলেজ পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করে ছাত্র–ছাত্রীকে সচেতন করতে হবে; পলিথিন বিক্রি, ব্যবহার বন্ধের নিমিত্তে এবং ভোক্তা পর্যায়ে সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা, সেমিনারের আয়োজন পূর্বক কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; পলিথিন তৈরির কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে; পলিথিনের বিকল্প পণ্য হিসেবে পচনশীল পাটজাত, কাগজের অথবা কাপড়ের পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে; পলিথিনের বিকল্প পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাকে এগিয়ে আসতে হবে; উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; আইনের ব্যবহার (যার কাছে পলিথিন ব্যাগ থাকবে তার উপর) যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্লাস্টিক, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাগজ, পাট বা সুতির কাপড়ের তৈরি ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসের ব্যবহার বাড়ালে প্রকৃতি এবং মানুষের জন্য ভালো হবে। দেশে ২০০২ সালে পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে আইন করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনটি যথাযথ প্রয়োগের অভাবে প্লাস্টিক–পলিথিন পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষণ করছে। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।