দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে।
আজ রবিবার (১৮ জুন) সকালে বৃষ্টিপাতের ফলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হলে সকাল নয়টা, সাড়ে নয়টার দিকে জোয়ারের সময় মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে।
নদীর উপরিভাগে অংকুরীঘোনা, গড়দুয়ারা নয়াহাট, সিপাহির, পাতাইজ্জ্যার টেক, কাগতিয়াটেক প্রভুতি স্হানে প্রতিজন ডিম আহরণকারী একশ’, দেড়শ’ এবং সর্বোচ্চ দুইশ’ গ্রাম পর্যন্ত ডিম পেয়েছে।
এদিকে, জোয়ার পরিপূর্ণ হলে বারোটা, সাড়ে বারোটার দিকে মাছের নমুনা ডিম ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে নদীতে ভাটা শুরু হলে তিনটা, সাড়ে তিনটার দিকে পুনরায় নমুনা ডিম ছাড়া শুরু হয়।
একইভাবে নদীর মাছুয়াঘোনা, আজিমারঘাট, নাপিতেরঘাট, কুমারখালী, ফারিরমুখ প্রভৃতি এলাকায়ও সকালের দিকে সামান্য পরিমাণ নমুনা ডিম পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ইতিপূর্বে মাবস্যা, পূর্ণিমার পাঁচটি জো/তিথি চলে গেছে। এইসব জো/তিথিতে ডিম আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে প্রস্তত থাকলেও অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় মাছ ডিম ছাড়েনি।
জুন মাসের এই মাবস্যার শেষ জো ডিম ছাড়ার এই বছরের শেষ জো/তিথি। সর্বশেষ এই জো’র অপেক্ষায় ছিল ডিম আহরণকারীরা।
আজ রবিবার সকালে নদীতে নমুনা ডিমের আলামত দেখে বিকালে ভাটার সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল ডিম আহরণকারীরা কিন্তু বিকালে ভাটার সময়ও মাছ ডিম ছাড়েনি।
ভাটার সময় নদীর নীচের দিকে ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে দ্রুত নীচের দিকে চলে যায়। তবে তেমন ফল হয়নি। মাছ ডিম ছাড়েনি।
আজ রবিবার দিবাগত রাতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ডিম আহরণকারী ও হালদা গবেষকরা।
গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান, তার পাঁচটি নৌকা রয়েছে। আজ রবিবার তার নৌকায় সকাল থেকে দেড়শ’, দুইশ’ গ্রাম ডিম পাওয়া গেছে।
এদিকে, মাছুয়াঘোনা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মো. লোকমান জানান, তার ছয়টি নৌকা রয়েছে। আজ তিনিও সারা দিনে একশ’, দেড়শ’ গ্রাম ডিম আহরণ করতে পেরেছেন।
মধ্যম মার্দাশা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী আশু বড়ুয়া জানান, তিনি ডিম আহরণের জন্য চারটি নৌকা নিয়ে নদীতে ছিলেন। তিনিও দেড়শ’, দুইশ’ গ্রামের মতো ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে জানান।
হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, হালদায় কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সর্বশেষ জো অর্থাৎ অমাবস্যার জো চলছে। ১৫ জুন শুরু হওয়া এই জো চলবে ২০ জুন পর্যন্ত।
গতকাল শনিবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের ফলে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে আজ রবিবার অল্প পরিমাণে নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। রাতে বৃষ্টি হলে ও পাহাড়ি ঢল নামলে কার্পজাতীয় মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়ে দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ও হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদা নদীতে মা মাছ আজ রবিবার নমুনা ডিম ছেড়েছে। শনিবার সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয় কিন্তু বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল না। ফলে এই শেষ তিথিতে মাছ আজ রবিবার সকালে নমুনা ডিম ছাড়ে।
রাতে বৃষ্টিপাত হলে নদীতে পর্যাপ্ত ঢলের সৃষ্টি হলে ডিম ছাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী সকালে নদীতে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।