| মঙ্গলবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে চাই

কার্যকর পদক্ষেপ

সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিনই প্রকাশিত হয় সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ। দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। তার খবর পাই প্রতিদিন। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এটি সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পাওয়ার কথা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গুরুতর এই সমস্যাটি তেমন গুরুত্ব পায় না। বিশ্লেষকরা বলেন, যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে, সড়কমহাসড়কে মানুষের মৃত্যু প্রতিনিয়তই ঘটবে, কারোর কিছু করার নেই। তাঁরা বলেন, আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, কী কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভবএসবও বহুল আলোচিত বিষয়। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী।

প্রতিবছর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হয়। দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলাই এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মানদণ্ডেই কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে বাংলাদেশের সূচকের উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি হয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম। অথচ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি যানবাহন যেসব দেশে চলে সেখানেও কিন্তু এত দুর্ঘটনা হয় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং বাইরে যতক্ষণ থাকে, তার ৯০ শতাংশ সময় পার্ক করা থাকে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘নামবিও’ কর্তৃক প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স২০১৯এর তথ্য অনুযায়ী, যানজটের দিক দিয়ে ঢাকার অবস্থান প্রথম। ২০১৮ সালে এর অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। মাত্র তিন বছর আগেও ঢাকা তৃতীয় স্থানে ছিল। যানজটের মূল কারণ হিসেবে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে।

 

 

সাংবাদিক রাজন ভট্টাচার্য তাঁর এক লেখায় বলেছেন, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ এবার ৬২টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করলেও দিন দিন গাড়ির সংখ্যা কিন্তু বেড়েই যাচ্ছে; যা সত্যিই উদ্বেগের। কেন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর হতে পারছে এর জবাব হয়তো সরকারের নীতি নির্ধারকরাই ভালো দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলছে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে মৃত্যু ১২ হাজার। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০২১ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী! বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বে সড়কপথে বাস সম্পৃক্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। দেশে সড়কপথে চলাচলরত প্রতি ১০ হাজার বাসের বিপরীতে বাস সম্পৃক্ত দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রাণহানি ঘটে ২৮৭ জনের। এদিক থেকে বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে কেবল জিম্বাবুয়ে। দেশটিতে প্রতি ১০ হাজার বাসের বিপরীতে বাসসম্পৃক্ত দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২১৭ জনের। এর বাইরে আর কোনো দেশে বাস সম্পৃক্ত দুর্ঘটনায় এত বেশি প্রাণহানির নজির নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুই যুগ ধরেই বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকাকে একটি যানজটমুক্ত শহরে রূপান্তরিত করতে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। কিন্তু দুই যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরও আজ অবধি এ ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের কোনো খবর নেই। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা যেন অনেকটা দায়সারা গোছের। এদিকে রিকন্ডিশন মাইক্রোবাস, কার ও জিপ আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো কোনো পরিবারে চারপাঁচটি করেও প্রাইভেট গাড়ি রয়েছে। অবশ্য তারা মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স দিয়েই প্রাইভেট কার চালাচ্ছেন। রাজধানীতে গণপরিবহনের তুলনায় কারমাইক্রোবাসের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় যানজট আর জনদুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। শুধু রাজধানী নয়, দেশের অন্য বিভাগীয় শহরগুলোতে নানাবিধ সমস্যায় জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের লক্ষ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলপারদের গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল। তাহলেই কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে সড়ক দুর্ঘটনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে