নতুন নতুন পণ্যকে রপ্তানি তালিকায় যুক্ত করতে হবে

| বুধবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অভূতপূর্ব অর্জন সাধিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনীর পরিচয় রেখেছি। পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, অলাভজনক উন্নয়ন উদ্যোগ বিশেষ করে ক্ষুদ্রঋণ, গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক খাতের বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক উদ্যোক্তরা যথেষ্ট সাফল্য দেখিয়েছেন। সামপ্রতিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইজ ওয়াটার হাউস’ এর মতে আগামী ২০৫০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন-এর মতো দেশগুলো। এছাড়া সম্ভাব্য নেতৃস্থানীয় দেশের তালিকায় প্রণয়ন করা হয়েছে, যারা ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে পরিণত হবে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ১২ কোটি টাকা। বর্তমানে তা ৪ লাখ ১৬ হাজার ১শ ৫৫ কোটি টাকা। একই সময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমাণ ছিল ৭০ মার্কিন ডলার। এখন তা ৪শ ৫৬ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের আইটি খাত রপ্তানি বাণিজ্যে বিশেষ অবদান রাখতে শুরু করেছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ হচ্ছে। আমদানি রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে জনগণের গড়ে আয়ু হলো ৬৫ বছর। বাল্যবিবাহের প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি বাণিজ্যে আশাতীত অগ্রগতি হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘রপ্তানি বাণিজ্যে গতি’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বিস্তারিত অবগত হলাম আমরা। এতে বলা হয়েছে, করোনার দুর্দিনে মুখ থুবড়ে পড়া দেশের রপ্তানি বাণিজ্য গতিশীল হয়ে উঠছে। বিশ্বের শিপিং সেক্টরের বন্ধ্যাত্ব এবং বিভিন্ন দেশ থেকে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রপ্তানি বাণিজ্য এখন আবার চাঙ্গা। বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলে রপ্তানি আয় ৫১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ লকডাউন দেয়ায় তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের রপ্তানি পণ্যের বাজার সংকুচিত হয়ে যায়। পৃথিবীর অনেক দেশ আমদানি কমিয়ে দিয়েছিল। মানুষ বাহুল্য বর্জন করায় কমে গিয়েছিল পণ্যের চাহিদা। সবকিছু মিলে দুই বছরের করোনাকালে রপ্তানি আয় কমে গিয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছিটকে পড়ারও উপক্রম হয়েছিল।
দুই বছর পর বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি ঘটেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে নিয়েছে। এখন ব্যবসা বাণিজ্য চাঙ্গা হয়ে উঠছে। মানুষ কেনাকাটা করছে। একই সাথে প্রায় থমকে যাওয়া আন্তর্জাতিক শিপিং সেক্টরেও গতি ফিরেছে। এতে করে রপ্তানির পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৩ হাজার ৫৪২ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য রপ্তানি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে রপ্তানি হয় ৭০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার পণ্য। মার্চে ৭৬ হাজার ২শ টিইইইউএস কন্টেনার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা রেকর্ড বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল জাতীয় রপ্তানি ট্রফি প্রদান উপলক্ষ্যে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, কোভিড অতিমারির প্রার্দুভাবের পর দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির ধারা অক্ষুন্ন রেখে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে এসময় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের রপ্তানি বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রপ্তানি খাতের অবদান ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে স্বল্পোন্নত দেশ থাকাকালে প্রাপ্ত অনেক অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ভবিষ্যতে আর থাকবে না। এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে।

রপ্তানি বাণিজ্যে টিকে থাকার জন্য পণ্যের মানোন্নয়নের পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি, বর্তমান বাজারকে সংহত করা এবং নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি তালিকায় যুক্ত করতে হবে। এছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো নিজেদের শক্তির জায়গাগুলোতে বেশি গুরুত্বারোপ করা। বাংলাদেশের মতো রপ্তানিমুখী দেশগুলোর জন্য নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে বেশ কিছু পণ্য। তাই রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং সাথে সাথে নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে