৫০ বছরের সমস্ত অর্জন ধরে রাখতে হবে

| শনিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে সমৃদ্ধির সোপান বেয়ে আজকের বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দেশের মানুষের শান্তি চাই, নিরাপত্তা চাই, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই।’ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে দুই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ দেশের সব ধর্মের মানুষ যাতে সমানভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে, সরকার তা নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হব। আজকে সেটা আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ সেই এগিয়ে চলার পথে করোনা মহামারি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও সরকার ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক গৌরবময় অর্জনের সাফল্যগাথা রচনা করেছে বাংলাদেশ। এক সময় অতিদরিদ্র একটি দেশ হিসেবে এ দেশের পরিচয় ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন নিয়ে তাঁরই সুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। এ বছর তা অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। সাধারণ পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সেশনে গৃহীত হয় আমাদের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের এই প্রস্তাব। আগামী ২০২৬ সালে স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। এর আগে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানদণ্ডে বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সকল শর্ত পূরণ করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। আগামী ২০ বছর পর দেশে আর কোন দরিদ্র প্রায় থাকবে না। ৫০ বছর আগে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল গড়ে মাত্র প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার। এখন তা উন্নীত হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে। দেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০৩১ সালে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং আগামী ২০৪১ সালে উচ্চ আয়ের উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে স্থান করে নেবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলামের মতে, স্বাধীনতা-উত্তর ৫০ বছরে উপরে উল্লিখিত প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সত্ত্বেও কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে বড়সড় চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুটো গুরুতর বিষয়কে সামনে আনতে চাই। প্রথমত, এখনো এদেশের জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে সর্বব্যাপ্ত দুর্নীতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করলেও গত তিন বছরে এই অঙ্গীকার পূরণকে সত্যিকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, ২০১৮ সালের নির্বাচনে লাইনচ্যুত গণতন্ত্রকে আবারো লাইনে পুনঃস্থাপন করা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ঐ নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র যে জালিয়াতির দুষ্টচক্রে বন্দী হয়ে গেছে তা থেকে সহজে জাতির নিষ্কৃতি মিলবে না।’ এ বিষয়গুলো আসলে নীতিনির্ধারকদের মাথায় রাখতে হবে।
৫০ বছর একটি জাতির জীবনে খুব বড় পরিসর নয়। তবু পরাধীনতার শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা সহস্র বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান একটি জাতির সামনে অর্ধ শতাব্দীর এই মাইলফলক অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর যে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। আমরা চাই, বাংলাদেশ আরো অগ্রসর হোক। এই ৫০ বছরে যে সব অর্জন সাধিত হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। সমস্বরে বলতে চাই, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃতি আদায়কারী দেশটির নাম এখন বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে