জাতীয় কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রতিমা দাশ | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

আবহমান বাংলার আকাশে যতদিন রক্তিম সূর্য প্রজ্বলিত হয়ে উঠবে, ততদিন কাজী নজরুল ইসলাম অনন্য ব্যক্তিত্ব হয়ে সাহিত্যের মূল স্তম্ভ হয়ে বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর সকল বাঙালির বুকে। তিনি একদিকে যেমন রোমান্টিক কাব্য রচনায় আবেগ ময়, প্রেমময়, বিরহী কবি অন্যদিকে সমকালীন রাজনৈতিক সামাজিক সংস্কৃতিক পটভূমিকায় অবিলম্বে সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় রচনার ক্ষেত্রে তিনি বিদ্রোহী কবি দ্রোহের কবি মানবতার কবি। বর্তমান যুগে সারা বিশ্বে ধর্মের নামে যখন এতো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় তখন কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য আরও বেশী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন প্রতিটি পাঠকের মনে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর প্রতিটি কর্মে, সাধনায় এক অসামপ্রদায়িক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখাতেন, তাঁর চেতনা অন্তর্গত তারুণ্যের প্রতীক হয়ে তারুণ্যের প্রতি তার আহবান ছিলো, হিন্দু মুসলমান সকলে মিলে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বলুক ‘আমার মানুষ ধর্ম’। তাহলেই সৃষ্টির আদি বাণী অবলম্বন করে মহাজাতি জন্ম নিবে সকলে মিলে ধ্বনি তুলুক “শুধু মানুষ বাঁচিয়া থাক ভাই, ভারতের শুধু চির-কিশোর মানুষেরই জয় হোক। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর এক ভাষণে বলেছিলেন কেউ বলেন আমার বাণী যবন কেউ বলেন কাফের, আমি বলি দুটোর কিছুই নয়। এরপরে সমপ্রদায়গত মিলনের চেষ্টায় কথা তুলে খানিক মজা করে বলেছিলেন, আমি মাত্র হিন্দু মুসলমানকে এক জায়গায় এনে হ্যান্ডশেক করাবার চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। ‘মন্দির মসজিদ’ প্রবন্ধে সেসময়কার দাঙ্গা নিয়ে কথা তাঁর যে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ দেখি তা লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ‘মানবতার দিকে যারা ফিরেও তাকায় না তারা ছোরা আর লাঠি নিয়ে নিজের ধর্মসমপ্রদায় রক্ষা করে’! কবি নজরুলের ভাষ্যমতে ‘ইহারা ধর্মমাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে নাই, শাস্ত্রের অ্যালকোহল পান করিয়াছে।’ তবে কবির দৃষ্টিভঙ্গি অসামপ্রদায়িক চিন্তা দিয়ে এতো প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছে যে ‘হিন্দু মুসলিম ঐক্য’ নজরুলের অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিলো। যুবসমাজের উদ্দেশে কবির আবেদন ‘আমার ধর্ম যেন অন্য ধর্মকে আঘাত না করে, অন্যের মর্মবেদনার সৃষ্টি না করে, একই দেশের ফুলে, ফসলে পুষ্ট দুই সমপ্রদায়ের বিরোধ অত্যন্ত নিন্দনীয়’। তিনি বিশ্বের সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করতেন। তার হৃদয়ে ছিল অফুরন্ত মানবপ্রেমের সম্ভার। সাম্যবাদী কবি তার সাম্যবাদের কাব্যে ঈশ্বর থেকে আরম্ভ করে চোর ডাকাত কুলি মজুর, বারাঙ্গনা ইত্যাদি নিম্নশ্রেণির মানুষের কথা লিখে গেছেন। যেমন কুলি-মজুর কবিতায় তিনি বলেছেন শ্রমজীবীদের শ্রমের বিনিময়ে সভ্যতা গড়ে উঠেছে সুতরাং সভ্যতার পরিচালিকার শক্তি তাদের হাতে ন্যস্ত থাকার কথা। তাঁর সাম্যবাদী কবিতায় আমরা লক্ষ্য করি, ‘মানুষে মানুষে সব ধর্মীয় জাতিগত ব্যবধান ঘুচে গেছে, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ মুসলিম খ্রিস্টান।এবং মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান! গতকাল ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। এ উপলক্ষে কবির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা
পরবর্তী নিবন্ধকমার্স কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ সুসেন বড়ুয়ার সাথে ছাত্রলীগের মতবিনিময়