জেলা আওয়ামী লীগ ও দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নেতাদের হিসেব–নিকেশের সমীকরণ না মেলার কারণে গত ৯ মাস ধরে আটকে আছে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। কমিটি ঘোষণার সব কিছু ঠিকঠাক হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নানামুখী সমীকরণে আটকে আছে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। বিশেষ করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতার পছন্দের সাথে সমন্বয় করতে পারছেন না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বায়োডাটা জমা দিয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক পদপ্রত্যাশী। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সাথে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মতবিনিময়ও করেছেন।
কিন্তু গত এপ্রিল মাসে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ৭ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে লবিং–তদবির করছেন তাদের মধ্য থেকে যাচাই–বাছাই করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে ৭ জনের নামের তালিকা জমা দেয়া হয়। সেই তালিকার দুই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতা এবং নারী নির্যাতনের মামলাসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য যে ৭ জনের নামের তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে তারা হলেন মো. ইরফান উদ্দিন (সাতকানিয়া), চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী সালেহ উজ্জামান তানভির, বিগত কমিটির সহসভাপতি জয়নাল আবেদীন (সাতকানিয়া), বিগত কমিটির সহসভাপতি ইয়াছিন চৌধুরী জনি (সাতকানিয়া), বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান চৌধুরী (বাঁশখালী), কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসাইন ও রবিউল হায়দায় রুবেল (আনোয়ারা)।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী প্রার্থীদের তালিকায় আরো যারা আছেন তারা হলেন দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের গত কমিটির সহসভাপতি হোসাইন মাহমুদ পাভেল, শাহরিয়ার মুনির জিসান (বোয়ালখালী), সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আলী, লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এরশাদুর রহমান নিশাদ, বিগত কমিটির প্রচার সম্পাদক আবু বক্কর জীবন (বোয়ালখালী), বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রাসেল।
আটটি উপজেলা ও ছয়টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক এই বৃহৎ জেলায় গত ৬ বছর ধরে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। গত ৬ বছরে ছাত্রলীগ কোনো উপজেলায় সম্মেলন করতে পারেনি। সম্মেলন ছাড়াই বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা এবং কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নানা অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলে নতুন কমিটির পদ প্রত্যাশীরা নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য নানাভাবে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে এই ব্যাপারে কথা হলে তারা জানান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি প্রায় ঠিকঠাক হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কারণে তা আবার আটকে গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একেক জনের পছন্দ একেক জন। সবার সাথে সমন্বয় করে প্রকৃত ছাত্রত্ব আছে এমন ত্যাগী মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন ছাত্রদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি গতকাল আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা সুপারিশ করেছেন, যারা আগে ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটেরও সদস্য ছিলেন না। তবে যারা পূর্বে ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলেন না তাদেরকে কাউকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নাও রাখা হতে পারে। ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃবৃন্দ যে সব জেলায় নতুন কমিটি দিয়েছেন–তাতে যারা ডাইনামিক, যাদের ছাত্রত্ব আছে, যাদের রাজনৈতিক ব্র্যাকগ্রাউন্ড ভালো, আগের পদ–পদবীতে ছিলেন এমন ছাত্রদের দিয়েই কমিটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে ঘিরে দীর্ঘদিন পর দক্ষিণে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হলেও বারবার পিছিয়ে যাওয়ার ফলে হতাশ হয়ে পড়ছেন পদপ্রত্যাশীরা।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু ল’ ট্যাম্পল কলেজের ছাত্র এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এর প্রায় তিন বছর পর ২০২০ সালের ৪ মার্চ এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক ঠিক রেখে গঠনতন্ত্র অমান্য করে ২৭৬ সদস্যের দক্ষিণ জেলা শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।