৯ বছর পর রাঙামাটি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি

৬২ জনের আংশিক কমিটিতে সহ-সভাপতি ৪০, আছে বিবাহিতরাও!

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | সোমবার , ১ জুলাই, ২০২৪ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

২০১৫ সালে এক বছরের জন্য গঠিত হলেও রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সেই কমিটি ভেঙেছে ৯ বছরে এসে। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দু’মাস পর শনিবার (২৯ জুন) রাতে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেখানেও যেন চমকের শেষ নেই। ৬২ জনের নাম ঘোষণা করে দেওয়া নতুন কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন মো. রনি হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন সোহাগ চাকমা। সহসভাপতি পদে ৪০, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে ১০ জন করে ২০ জনকে। অথচ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদী জেলা সংসদের পূর্ণ কমিটি হবে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট। আর সেই কমিটিতে সহসভাপতি পদে ২১, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৯ জন করে রাখার সুযোগ রয়েছে। আংশিক কমিটিতে পদ সংখ্যাতেই দেখা গেছে গঠনতন্ত্রের ব্যতয়। অভিযোগ উঠেছে, নতুন ঘোষিত কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী ও নানা প্রসঙ্গে বিতর্কিতরাও। মানা হয়নি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা। পদ বণ্টনেও ‘সিনিয়রজুনিয়র’ দেখা হয়নি।

সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সহসম্পাদক ও নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন ফাতেমা তুজ জোহরা রেশমী। গঠনতন্ত্রের নানা ব্যতয়ের অভিযোগ তুলে রেশমী বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের এই কমিটিটা জেলা আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে করা হয়নি। দীর্ঘ ৯ বছর পর সম্মেলন হলো; সেই সম্মেলনের দুই মাস পর কমিটি এলো। আবার সেই কমিটিতে ছাত্রদল থেকে আসা নেতা প্রথম সহসভাপতি হয়েছেন। চাকরিজীবী সভাপতি হয়েছেন। অছাত্রবিবাহিতরাও পদ পেয়েছেন। বাদ পড়েনি বয়সসীমা পেরুনো নেতারাও। সভাপতির নিজের ছাত্রত্ব নেই। আবার কম বয়সী নেতাকর্মীকে আংশিক কমিটির নামে ৬২ জনের কমিটিতে রাখা হয়েছে। সব কিছু মিলে এটি একটি হাস্যকর ও অগঠনতান্ত্রিক কমিটি হয়েছে।’ যদিও গুঞ্জন রয়েছে, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী এই রেশমিও বিবাহিত।

জেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সহসম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সারও ছিলেন নতুন কমিটির সভাপতি পদ প্রত্যাশী। কায়সারের অভিযোগ, ‘৯ বছর পর রাঙামাটি ছাত্রলীগের কমিটি হলো; কিন্তু সেখানে আমাদের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কমিটি হয়নি। একজন চাকরিজীবী হয়েছেন সভাপতি। অনেক জুনিয়র এবং অছাত্ররা পদে এসেছে।’

তবে নতুন কমিটির সভাপতি মো. রনি হোসেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ও সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা চট্টগ্রাম সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন দাবি করেছেন।

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. রনি হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাবেক যারা ছিলেন; তাদের অভিনন্দন ও দোয়া প্রত্যাশা করি। তাদের রেখে যাওয়া ছাত্রলীগের ধারাবাহিকতা যেন আমরা রক্ষা করতে পারি। কেন্দ্রীয় সভাপতিসম্পাদকের নির্দেশে ঢালাওভাবে বা গতানুগতিক রাজনীতি না করে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রগতিশীল রাজনীতির বার্তা রাঙামাটির প্রত্যন্ত জায়গায় পৌঁছে দেব। জননেতা দীপংকর তালুকদার ও হাজী মুছা মাতব্বরের হাতকে শক্তিশালী করতে সর্বাত্মক প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক চর্চা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় আমরা পৌঁছে দেব।’ নতুন কমিটিতে ‘সিনিয়রজুনিয়র’ পদবণ্টনের আপত্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমন বিষয়গুলো দেখব।’

রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটিতে পাহাড়িবাঙালি জনগোষ্ঠীর যে সম্প্রীতি সেটা সমুন্নত রেখে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করে যাব। জেলা ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন সেটি বাস্তবায়নে স্মার্ট ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাবে।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল (সোমবার) সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলার প্রায় সব ইউনিটের নেতাকর্মীরা যথাসময়ে উপস্থিত হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্মেলন মঞ্চে দেরিতে আসায় উদ্বোধন হয় ৩ ঘণ্টা দেরিতে। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদেরও ছিল উচ্ছ্বাসউদ্দীপনা। নতুন কমিটিতে আসন পেতে নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছিলেন ৭২ জন।

এর আগে, ২০১৫ সালের ২ জুন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। এর পরদিন ৩ জুন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের ৬ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বছরের জন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও কমিটির ঘোষণার আড়াই বছর পর ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি ১৫১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের দেড় বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্যুতের খুঁটিতে কাজ করতে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অঙ্গার যুবক
পরবর্তী নিবন্ধপথচারী নিহতের পর একই দেয়াল ধসে এবার নারী আহত