চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শৃঙ্খলা পরিপন্থী বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বহিষ্কৃত ৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মানবিক বিবেচনায় এসব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আগের প্রশাসনের তদন্তে তারা দোষী সাব্যস্ত হলেও পুনঃতদন্তের প্রতিবেদনে তাদের ক্ষমার সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় বলে জানান তিনি।
প্রক্টরিয়াল বডির সেই সময়ের একজন সদস্য আজাদীকে বলেন, আমরা ফুটেজ, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণ করে তাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার করেছি। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তাও নেয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব ও প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, পুনঃতদন্তের ভিত্তিতে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কোন ৯ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তা খোলাসা করেননি তিনি।
তিনি বলেন, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে পুনঃতদন্তের আবেদন জানিয়েছিল। এরপর পুনঃতদন্ত কমিটি করা হয়। পুনঃতদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। নয় শিক্ষার্থীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখন বলতে পারব না। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আরও একটি মিটিং হবে। সে মিটিংয়ের পর বলতে পারব।
জানা যায়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপ–গ্রুপ বিজয় পক্ষের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। যারা বহিষ্কারের পরও অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, থেকেছেন হলে।
এদিকে শাস্তির মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, অতীতেও বহিষ্কারাদেশ তুলে দেওয়ার পর ফের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলায় জড়িত থাকার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সে বছরের ডিসেম্বরে বহিষ্কৃত ৭ জনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। ৭ জনের মধ্যে একজন ছিলেন আইন বিভাগের ১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের খালেদ মাসুদ। গত ১৯ জুন রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য দোস্ত মোহাম্মদকে মারধরের ঘটনায় নেতৃত্বে ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৯ জানুয়ারি সাংবাদিক হেনস্তা, ছাত্রী হলে মারধরসহ পৃথক ছয় ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতদের ১৭ জন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে এদের মধ্য থেকে শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ৯ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।