নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেটের পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনায় কারাগারে থাকা নব্য জেএমবির ৯ সদস্যের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলার বাদী অনিল বিকাশ চাকমা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গতকাল চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিম তার সাক্ষ্য রেকর্ড করেন। ভার্চুয়ালি বিচার কাজ পরিচালনার এই ঘটনা ট্রাইব্যুনালটিতে প্রথমবারের মতো হয়েছে জানিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি রুবেল পাল আজাদীকে বলেন, চার্জগঠনের পর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু নানা কারণে তা হয়নি। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ও ট্রাইব্যুনাল দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে ইচ্ছুক। এরই ধারা বাহিকতায় আসামিদের ভার্চুয়ালি হাজিরের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৫ মার্চ পরবর্তী তারিখ ধার্য হয়েছে। সেদিন অন্যান্য সাক্ষীদের মধ্য থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
আইনজীবী রুবেল পাল বলেন, আদালতের তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইন ২০২০ এর ৫ ধারার ক্ষমতা বলে গত বছরের ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির ঘোঘিত প্র্যাকটিস নির্দেশনা অনুযায়ী ভার্চুয়ালি উপস্থিত হওয়া ৯ আসামির মধ্যে একজন ঢাকার কাশিমপুর ও বাকী আটজন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে উপস্থিত হয়েছেন।
২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ষোলশহর দুই নম্বর গেট মোড়ের পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটে। এতে দুই ট্রাফিক পুলিশসহ পাঁচজন আহত হয় এবং পুলিশ বক্সটিতে থাকা সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহৃত সুইচ বোর্ড নষ্ট হয়। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করে ট্রাফিক পুলিশের (উত্তর) টিআই অনিল বিকাশ চাকমা। পরে মামলার তদন্ত কাজের দায়িত্ব পায় নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপপরিদর্শক সঞ্জয় গুহ। এরপর গত বছরের ২৮ আগষ্ট সঞ্জয় গুহ’র চার্জশিট আমলে নিয়ে ১৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। বাকী একজন ১৭ বছর বয়সী আবু সাদেক কিশোর হওয়ায় শিশু আদালতে আলাদাভাবে তার বিরুদ্ধে বিচার কাজ চলছে। ট্রাইব্যুনাল যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন তারা হলেন মো. সাইফুল্লাহ, মো. এমরান, আবু সালেহ, মো. আলাউদ্দিন, মহিদুল আলম, মো. জহির উদ্দিন, মো. মঈনউদ্দিন, রহমত উল্লাহ, সাহেদ হোসেন, মো. সেলিম, আব্দুল্লাহ আল নোমান, আব্দুল কাইয়ুম, কায়সার উদ্দিন, মো. মোরশেদুল আলম ও দুবাই প্রবাসী মো. শাহজাহান। এর মধ্যে দুবাই প্রবাসী মো. জাহজাহান শুরু থেকেই পলাতক। জামিনে আছেন মহিদুল আলম, সাহেদ হোসেন ও মোরশেদুল আলম। বাকী ১১ জন কারাগারে আছেন (এরমধ্যে দুজন গতকাল সশরীরে হাজির ছিলেন)।
তদন্ত সংস্থা জানায়, আসামি মো. সেলিম ছিলেন ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর আকবরশাহ এলাকার পোর্ট লিংক রোডের বাংলাবাজার এলাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার ও লোহাগাড়ার জঙ্গল পদুয়া আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে। ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরমধ্যে ৮ জনই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মো. সেলিমের নাম বলেছেন এবং তার সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়েছেন। এদিকে পুলিশ বঙে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা নব্য জেএমবির সদস্য বলে পরিচয় শনাক্ত করে তদন্তকারী সংস্থা।