যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য টিম বিভিন্ন দেশের পণ্যে উচ্চহারের শুল্ক ৯০ স্থগিত রাখার এই সময়ের মধ্যে ৯০টি চুক্তি করতে চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্টের শুল্ক যুদ্ধ দ্রুত সমাধান করার চ্যালেঞ্জ ইতোমধ্যে স্পষ্ট। চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি উচ্চহারের শুল্ক আরোপের বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে বাজারে।
চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি বন্ধ হতে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও দর কমছে লাগাতার। এ পরিস্থিতিতে দ্রুতই কিছু বাণিজ্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়ছে। ট্রাম্পকে এখন এই ৯০ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য চুক্তি করা এমনকি অর্থবাজারেও আস্থা ফেরানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। বাণিজ্য চুক্তির এই আলোচনায় ট্রাম্পই প্রধান আলোচক হবেন বলে জানিয়েছেন তার বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। খবর বিডিনিউজের।
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথমেই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে বিদেশি বাণিজ্য কর্মকর্তারা আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে যাবেন, তাদের মধ্যে আছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিক। ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ইইউ পণ্যে যে উচ্চহারের শুল্কারোপ করেছিলেন তা নিয়েই আগামীকাল সোমবার দেনদরবার করবেন তিনি। ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারগুলোর অন্যতম। কিন্তু সেফকোভিক ওয়াশিংটন সফরের সময় ট্রাম্পের শীর্ষ বাণিজ্য আলোচক অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট থাকবেন আর্জেন্টিনায়। ফলে আলোচনায় তার অনুপস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন কতটা কার্যকরভাবে একের পর এক চুক্তিতে উপনীত হতে পারবে তা নিয়ে সন্দিহান বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।
কারণ বাণিজ্য চুক্তির মতো বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে গুরুগম্ভীর আলোচনা হতে হয়। আর মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে কোনও দেশের সঙ্গেই সমন্বিত একটি চুক্তিতে পৌঁছা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সাবেক এক শীর্ষ মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ওয়েন্ডি কাটলার।
হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো অবশ্য শুক্রবার এর উল্টো কথাই বলেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, স্কট বেসেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এই কাজ করে ফেলতে পারবেন। সুতরাং আমরা ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি করে ফেলতে পারব। এটি সম্ভব, বলেছিলেন তিনি। সে সময়ই নাভারো জানিয়েছিলেন, প্রধান আলোচক হবেন ট্রাম্প। তাকে ছাড়া কোনওকিছুই করা হবে না। কারণ, তিনি খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন।
ট্রাম্প এ সপ্তাহে যখন বেশিরভাগ দেশের ওপর তার পাল্টা উচ্চহারের শুল্ক কার্যকর ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই ৯০ দিনে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়ার সুযোগ পাবে। বাজারে এরই মধ্যে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্রুতই চুক্তিতে পৌঁছে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ আছে।
কিন্তু ট্রাম্প এবং অর্থবাজার উভয়ই সন্তুষ্ট হবে এমন বাণিজ্য চুক্তি করা ‘বিশাল কাজ’ বলেই মন্তব্য করেছেন ওয়েন্ডি কাটলার। তিনি বলেন, এর পরিবর্তে হয়ত ট্রাম্পের বাণিজ্য শিবিরকে চুক্তির জন্য কেবল গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং অন্যান্যদের জন্য ৯০ দিনের সময় আরও বাড়াতে হবে।
অতীতে দেখা গেছে, ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি ছোট বাণিজ্য চুক্তি করতেই লেগে গিয়েছিল ৮ মাস। আর যুক্তরাষ্ট্র–মেঙিকো ও কানাডার একটি সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি করতে সময় লেগেছিল দুই বছরেরও বেশি।